সীমান্তে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঢল, থামছে না কান্না

মিয়ানমারে সহিংসতার পর থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানরা ছুটে আসছে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আসা এসব মানুষের ঢল কোনভাবেই থামছে না। বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় নো ম্যানস ল্যান্ডে এখনো অপেক্ষায় আছে হাজারো রোহিঙ্গা মুসলমান।

মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ আরও তিনজন রোহিঙ্গাকে রোববার ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা মিয়ানমারের গুলির শব্দে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর নানা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে। সীমান্তে অব্যাহত রয়েছে বিজিবি’র কড়া নজরদারী।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের পুলিশ চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা হামলার পর অশান্ত হয়ে ওঠে রাখাইন রাজ্য। এর পর সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার পর জ্বলছে রোহিঙ্গা বসতি। চলছে সশস্ত্র সংঘাত। মরছে মানুষ। গুলির শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্ত এলকায়।

মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভ্যাশন আর্মি (আরসা)’ নামে মুসলিম রোহিঙ্গা জঙ্গিদের একটি বিশাল দল বৃহস্পতিবার ভোররাতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের ৩০টি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে পরিকল্পিত হামলা চালায়। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের কয়েকজন সদস্যসহ কমপক্ষে ৯১ জন নিহত হয়।

ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। অনুপ্রবেশকারি এসব রোহিঙ্গাদের কান্না যেন থামছে না। বৃদ্ধ, নারী ও শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের যেন ঢল নেমেছে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র শত চেষ্টার পরও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।

বিজিবি সদস্যরা রোহিঙ্গাদের প্রতিহতের চেষ্টা করলেও রাতের আধারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে অনেক রোহিঙ্গা। তবে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান বিজিবি মহা পরিচালক।

বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রীতিমত হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

আনান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর পরই মিয়ানমারের মংডুর নাইকাদং ও কোয়াংছিদং গ্রামে রোহিঙ্গাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গুলিতে অনেক রোহিঙ্গা নিহত হন। তাই রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে বলে জানান সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

গত বছরের অক্টোবরেও মিয়ানমারে এ ধরণের একটি হামরায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ ব্যাপক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় কমপক্ষে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়।