সীমান্তে হত্যা : দুঃখ প্রকাশ করেই দায় সারছে বিএসএফ
দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক পতাকা বৈঠকে সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিক হত্যা বেড়েই চলেছে। গত ১ মাসে উত্তরের ৪ জেলায় (ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বিএসএফের হাতে ৫ বাংলাদেশি নিহতসহ আহত ও আটক হয়েছেন আরও কয়েকজন। আর এসব হত্যাযজ্ঞের পর বরাবরই ভারতের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও বন্ধ হয়নি হত্যা। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে খলিল (২৫) নামে এক যুবক নিহত হন। ১৮ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্তে জাহাঙ্গীর আলম রাজু (২১), ২২ জানুয়ারি হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে জেনারুল এবং ২৮ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাবু (১৮) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হন। আর চলতি মাসের ২ তারিখে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বিএসএফের গুলিতে আসাদুল ইসলাম (৩০) নামের এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হন।
এর আগে, গত ১০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে শফিকুল ইসলাম ভুলু (৩০) নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে আটক করে বিএসএফ। এ সময় বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে তিন বাংলাদেশি কাঁটাতারের বেড়ায় আটকা পড়ে গুরুতর আহত হন। আহতরা হলেন, উপজেলার গোরকমন্ডপ গ্রামের জানে মামুদের ছেলে মমিনুল ইসলাম কাঞ্চিয়া (৩৭), একই গ্রামের মৃত হজরত আলীর ছেলে আব্দুল জলিল (৩২) ও আলতাফ হোসেনের ছেলে আশরাফ হোসেন (৩৮)।
এছাড়া গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার পূর্ব সাড়ডুবি সীমান্তে বিএসএফের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হন ৪ বাংলাদেশি।
বিএসএফ বরাবরই এসব হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে সীমান্তে চোরাচালানকে দায়ী করেছে এবং পতাকা বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করে হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বিএসএফ মুখে হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো ঘটনা।
গত ১৮ জানুয়ারি রাতে বিএসএফের কয়েকজন সদস্য অবৈধভাবে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশি গ্রামে অনুপ্রবেশ করে স্থানীয়দের উপর হামলার চেষ্টা করে। পরে গ্রামবাসী তাদেরকে ঘিরে ফেললে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা। পরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের বৈঠকে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনের (মাপা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট মুনীর চৌধুরী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্ত হত্যা দুটি প্রতিবেশী দেশের সামাজিক সম্পর্কের প্রধান অন্তরায়। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিরা সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের পক্ষ থেকে বারবার এ হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এক কর্মকর্তা (রংপুর) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমিয়ে আনতে বিজিবি বিভিন্ন তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু চোরাকারবারিরা ভারতের ভেতরে প্রবেশ করে মালামাল আনার সময় এ ঘটনা ঘটছে। বিএসএফের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে মিটিং করে সরাসরি গুলি না করে গ্রেফতার করার আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি। সেইসঙ্গে সীমান্তবাসীকে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন