সীমান্ত বন্ধের নির্দেশনাতেও সাতক্ষীরায় বন্ধ হয়নি অবৈধ চোরাচালান, চলছে মানুষের এপার-ওপার
বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার সাবধানতা অবলম্বন করে যাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। সংক্রমিতদের মধ্যে নতুন উপসর্গ ও ধরণ দেখা যাওয়ায় এখন টালমাটাল সেখানেও। এমনই পরিস্থিতিতে দুই সপ্তাহের জন্য ভারতের সাথে সীমান্ত চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। শুধুমাত্র ভারতে অবস্থানরত ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া বাংলাদেশিদের বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে আসার সুযোগ রেখে বেনাপোলসহ দু’টি স্থল বন্দরে চলাচল সুযোগ রয়েছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত চলাচল বন্ধের কঠোর সিদ্ধান্তকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিচ্ছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্তের শীর্ষ চোরাকারবারীরা। উপজেলার ১৭ কিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চলের শীর্ষ ও চিহ্নিত চোরাচালানের হোতারা তাদের চোরাকারবারী ধান্দা আরো কয়েকগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী অনেকে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীমান্ত অঞ্চলের একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘গত বছর থেকে করোনাকালে সীমান্তে চোরাচালান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা চরম আকার ধারণ করেছে সম্প্রতি সময়ে। ফেনসিডিল, গাঁজা, সোনা, রুপাসহ নানা পণ্যের এদেশ-ওদেশ করার চোরাচালানী কাজের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষও এপার-ওপার করে থাকে। রয়েছে ধুর (মানুষদের এপার-ওপার করাকে স্থানীয় ভাষায় ধুর বলা হয়) পারাপারও। হরহামেশা বাংলাদেশ থেকে ভারতে আবার ভারত থেকে বাংলাদেশ আসা যাওয়া করছে চিহ্নিত চোরাকারবারীরা। ফলে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধির শংকা থেকেই যাচ্ছে। অনেকে করোনার উপসর্গজনিত রোগে ভুগলেও করোনা টেস্ট না করে নিজেরাই স্থানীয়ভাবে ঔষুধপত্র খেয়ে আবার সুস্থও হয়ে যাচ্ছেন। ফলে করোনা হচ্ছে, কি হচ্ছে না সেটা বলা মুশকিল।’
তারো আরো বলেন, ‘শীর্ষ চোরাকারবারীরা কতিপয় অসাধু আইনশৃংখলা সদস্য, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকাররিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এসকল অবৈধ ব্যবসা চলমান রেখেছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া বাজারে রীতিমতো চোরাকারবারীদের প্রকাশ্য অফিস আছে। বাজার মসজিদের পাশে নাসির উদ্দীন ওরফে ঘাট নাসিরের ওই চোরাচালানী অফিস থেকে কলারোয়া ও পার্শ্ববর্তী শার্শার গোগা সীমান্ত পর্যন্ত চোরাচালানী নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নাসির উদ্দীন ‘প্রথিতযশা চোরাকারবারী’ ও স্বীকৃত ব্লাকার বলে তার নামে সাথে অটোমেটিক যোগ হয়েছে ‘ঘাট’ শব্দটি। ‘ঘাট নাসির’ না বললে তাকে কেউ চেনেই না। সেই ঘাট নাসিরের ছত্রছায়া এমন কোন চোরাচালানী নেই যেটা ওই সীমান্ত দিয়ে হয় না। ঘাট নাসিরের প্রত্যক্ষ গ্রুপে শতাধিক ব্যক্তি সরাসরি চোরাচালানী কার্যক্রমে সক্রিয়। তারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে ভারত আর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে। ফলে তারা যেমন সরকারি কঠোর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন ঠিক তেমনি তাদের কারণে করোনার ভারতীয় ধরণ বাংলাদেশে আসার ব্যপক সম্ভাবনাও রয়েছে।’
ঘাট নাসির চোরাচালান সিন্ডিকেটের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা পেটের দায়ে ছোটবেলা থেকে এই কাজে জড়িয়ে গেছি। এখন আর ছাড়তে পারি না। কী করবো? সাতক্ষীরার তলুইগাছা ও কলারোয়ার কেঁড়াগাছি সীমান্ত থেকে পুরো কলারোয়ার সীমান্ত পেরিয়ে শার্শার গোগা সীমান্ত পর্যন্ত আমরা যেকোন মালামাল আনা নেয়া করে থাকি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষজনকে এপারে-ওপারে করতে হয়। তাছাড়া ধুর পার করা হয়ে থাকে। করোনা’কে আমরা তেমন গুরুত্ব দেই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যতই সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ থাকুক, আমাদের কাছে কিছুই বন্ধ না। আমরা এপার-ওপার ম্যানেজ করে চলি।’
ভারতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা আর বাংলাদেশ সরকারের সীমান্ত চলাচল বন্ধের পরেও সম্প্রতি কলারোয়ার মাদরা ও পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষ। তাদের কয়েকজনকে আটকও করেছে বিজিবি। আবার অনেককে ধরতে পারেনি। তাদের অনেকেই দেশে ঢুকে পড়েছেন। ফলে করোনার ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিজিবি’র সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে কলারোয়ার মাদরা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে ঢোকার সময় তিন বাংলাদেশিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে বিজিবি।
আটককৃতরা হলেন- রাজধানী ঢাকার বক্সী নগরের নারায়ন সরকারের ছেলে মানিক সরকার (৩২), সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আখড়াখোলার জিয়ারুল সরদার্রে ছেলে আতিকুর রহমান রাসেল (২০) ও যশোরের ইছামতি গ্রামের শৈলেন বিশ্বাসের ছেলে সুবর্ণ বিশ্বাস (৩০)।
এর একদিন আগে বুধবার (২৮ এপ্রিল) রাতেও অনুরূপভাবে কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশে আসার সময় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের গায়েনবাড়ি এলাকার রহমান উজিয়া কাগুচির ছেলে আজগর আলী (৪৫), তার স্ত্রী রুবিয়া বিবি (৩৫), মেয়ে আফরোজা খাতুন (১৫) ও আশা খাতুনকে (০৭) আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করে বিজিবি।
দু’টি ঘটনাতেই বিজিবি অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে যথাক্রমে কলারোয়া থানা ও সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপর্দ করে এবং পুলিশ যথানিয়মে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।
তবে তাদের কারোনার নমুনা পরীক্ষা বা কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবীর বলেন, বিজিবি ভারত থেকে অবৈধপথে আসা লোক আটক করে থানায় সোপর্দ করে। আমরা তাদেরকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তবে থানায় তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার কোনো বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠায়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন