সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেন

একের পর এক আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ। সুযোগও তৈরি হয়েছে অসংখ্য। কিন্তু সুইজারল্যান্ড আর সুইডেনের ফুটবলাররা সম্ভবত মাঠে নেমেছিলেন গোল মিসের মহড়া দেয়ার জন্যই। যদিও শেষ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড ডিফেন্ডারদের সহায়তায় একটি গোল আদায় করে নিয়েছিল সুইডেন এবং সেই একমাত্র গোলেই জাকা-শাকিরির সুইজারল্যান্ডকে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় করে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উটে গেলো সুইডেন।

ম্যাচের ৬৬ মিনিটে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন সুইডেনের এমিল ফরসবার্গ। বক্সের মধ্যে আসা বলটিতে অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন ফরসবার্গ। সামনে দাঁড়ানো ছিলেন ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকানজি। তার পায়ে লেগেই বলটি দিক পরিবর্তন করে সোজা প্রবেশ করলো সুইজারল্যান্ডের জালে। না হয়, ফরসবার্গের শটটি চলে যেতো সোজা গোলরক্ষকের হাতে। দুর্ভাগ্য সুইজারল্যান্ডের। সৌভাগ্য সুইডেনের। এই গোলেই কোয়ার্টারে পৌঁছে যায় তারা।

অথচ ম্যাচের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুইজারল্যান্ডই খেলেছে সুইডেনের চেয়ে অনেক বেশি। পরিসংখ্যানের বিচারে সেটা তো অবশ্যই। কারণ, পুরো ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের দখলে বল ছিল ৬৭ ভাগ আর সুইডেনের দখলে বল ছিল ৩৩ ভাগ। ৫৫৬টি পাস দিয়েছে সুইসরা। বিপরীতে সুইডেন পাস দিয়েছে কেবল ২৭৪টি। যদিও গোল লক্ষ্যে সুইডেন শট নিয়েছেন ৯টি আর সুইজারল্যান্ড শট নিয়েছে ৮টি। একটি শটই কেবল কাজে লেগেছে। সেটা সুইডেনের।

খেলার শেষ মুহূর্তেও গোল শোধ করার সুযোগ পেয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু তাদের সামনে অনেক বড় বাধা ছিল সুইডেনের গেলরক্ষক রবিন ওলসেন। ৯০ +১ মিনিটে রিকার্ডো রদ্রিগেজের ক্রস থেকে সেফারোভিক খুব কাছ থেকে অসাধারণ একটি হেড নিয়েছিলেন। অনেক সময় এই হেডেই গোল হয়ে যায়। কিন্তু বলটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরে ফেলেন ওলসেন। রক্ষা করেন দলকে।

তার দুই মিনিট পরই ব্যবধান বাড়ানোর নিশ্চিত সুযোগ পেয়েছিলো সুইডেন। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে মাঝ মাঠ থেকে একাই সেটা নিয়ে ছুটে আসেন সুইডেনের মার্টিন ওলসন। কিন্তু তাকে বক্সের সামনে ফাউল করেন মাইকেল ল্যাঙ। রেফারি প্রথমে পেনাল্টির বাঁশি বাজালেও শেষ পর্যন্ত ভিএআর দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং ঘোষণা দেন ওটা ফ্রি কিক। ফ্রি কিক নেন ওলা তোইনভেন। তার শট সোজা পোস্টে গেলে সেটা ঠেকিয়ে দেন সুইস গোলরক্ষক। এরপরই শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি।

প্রথমার্ধের প্রায় শেষ দিকেই ম্যাচের সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগটি পেয়েছিল সুইডেন। ৪২ মিনিটে সেই দারুণ সুযোগটির অপচয় করে ফেললো সুইডিশরা। নিশ্চিত গোলের সুযোগ। এমন সুযোগ আর কখনও তারা পাবে কি না সন্দেহ।

মিকায়েল লাসটিগ ক্রস দেন আলবিন একদালকে। মাথা চোঁয়ালেও বলটি প্রবেশ করে যায় সুইজারল্যান্ডের জালে। কিন্তু তিনি পায়ের আলতো ছোঁয়ায় চেয়েছিলেন বলটি জালে প্রবেশ করাতে। সামনে গোলরক্ষকও নেই। একেবারে ফাঁকা পোস্ট। এমন সুযোগটা নষ্ট করলেন একদাল, পায়ে বল লগাতে গিয়ে। বলের গতির কারণে সেটি সোজা উঠে গেলো আকাশে। ফল, পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে বলটি বাইরে।

তার আগে পর পর দুটি দারুণ সুযোগ মিস করেছিল সুইজারল্যান্ড। ৩৮ মিনিটে কর্নার কিক থেকে বল নিয়ে ওয়ান-টু ওয়ান পাসে স্টিভেন জুবের আর জেমাইলি মিলে বল নিয়ে আসেন সুইডেনের পোস্টের সামনে। শেষ মুহূর্তে জেমাইলি একেবারে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও বলটি মেরে দিলেন বারের ওপর দিয়ে। সোজা শট নিতে পারলে, নিশ্চিত গোলের সুযোগ ছিল। ২ মিনিট পর আবারও দারুণ একটি সুযোগ। এবার জেমাইলি সেই সুযোগটি নষ্ট করে দেন। সুইডেনের জাল খুঁজে পেলো না তার শট।

ম্যাচটা শুরু থেকেই উপভোগ্য হবে, এটা ছিল জানা কথা। কারণ, ইউরোপের সমশক্তির দুই দল মাঠে নেমেছে। একের পর এক আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে জমে উঠবে- এটাই প্রত্যাশা ছিল সবার এবং হলোও সেটা। ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ উপহার দিয়েছে সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড।

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোলের সুযোগ মিস করে ফেলে সুইজারল্যান্ড। যদিও সুইডেন ডিফেন্ডাররা বল উপহার দিয়েছিল সুইজারল্যান্ডকে। কিন্তু জাদরান শাকিরি বলটা পেয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। বল মেরে দিয়েছে অনেক বাইরে। ৭ম মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু স্টিভেন জুবেরের শট ঠেকিয়ে দেন সুইডেন গোলরক্ষক ওলসেন।

অষ্টম মিনিটে সুইডেনের স্ট্রাইকার মার্কাস বার্গ ডান পাশ থেকে গোল লক্ষ্যে শট নিয়েছিলেন; কিন্তু তার শটটি চলে যায় পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে। এর খানিক পরই মার্কাস বার্গের আরেকটি বল ঠেকিয়ে দেয় সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্স। পরের মিনিটেই সুইডেনের আলবিন একদাল দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার ডান পায়ের শট চলে যায় পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।

ম্যাচের ১৪তম মিনিটে মিকায়েল লাসটিগ গোল লক্ষ্যে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তার শট চলে যায় পোস্টের বাইরে। ২৪ মিনিটে সুইজারল্যান্ডের স্টিভেন জুবের পেয়েছিলেন গোলের দারুণ এক সুযোগ। জাদরান শাকিরির ক্রস থেকে ভেসে আসা বলে হেড করেছিলেন জুবের। কিন্তু খুব কাছ থেকে নেয়া এই শট চলে যায় বাইরে।

২৮ মিনিটে মার্কাস বার্গ গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাম পায়ের শটটি ফিরিয়ে দেন সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক। ৩২ মিনিটে আরও একবার সুযোগ পেয়েছিল সুইজারল্যান্ডের রিকার্ডো রদ্রিগেজ। কিন্তু তার বাম পায়ের শট চলে যায় অনেক বাইরে। ৩৪ মিনিটে গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন গ্রানিত জাকা। কিন্তু এবারও তিনি বাম পায়ের শট পাঠিয়ে দিলেন পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।