‘সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা, নামসহ প্রকাশ করুন’
সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা জমা হয়েছে, সে নামগুলো জানতে চেয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘কার কত টাকা আছে, তাদের নামসহ প্রকাশ করুন। আমরা নামধামসহ জানতে চাই। এর হিসাবপত্র প্রকাশ করুন।’ শনিবার রাতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ‘এই বছরেই সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি পাচার হয়েছে। সুইস ব্যাংকে এই টাকা জমা রাখা আছে। বাংলাদেশকে গরিব দেশ বলা হয়, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে। এই টাকাগুলো কার, তাদের নাম জানা দরকার। নাম জানতে চাই, কারা সুইস ব্যাংকে এই টাকা জমা রেখেছেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘কথায় কথায় উন্নয়ন, এই উন্নয়নের নামে যে কত টাকা বানাচ্ছেন আর সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন, তার হিসাব নেই। এই হচ্ছে সরকারের উন্নয়নের নমুনা।’
এর আগে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে রাজনৈতিক খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে আসেন। এরপর তিনি নিজে দশ টাকা দিয়ে ফরম কিনে প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। নিজে পূরণ করার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একেএকে তার কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন তার প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। তবে আলোচনার বেশিরভাগ অংশে ছিল আগামী নির্বাচন ও সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।
সরকারের প্রতি সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে অনেক করেছেন। দশ বছরে সব শেষ করে দিয়েছেন। ’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আপনারা যেগুলো করেছেন; একে ধরো, একে মারো, একে গুম করো, মিথ্যে মামলা দাও। এগুলো আমরা করব না। আমরা সেগুলোতে বিশ্বাস করি না। সেগুলো করে কোনও দিন দেশে গণতন্ত্র আসবে না, সেগুলো করে দেশের কোনও উন্নতিও হয় না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির প্রধান।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পার্থক্যের বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কিন্তু এটা মনে করবেন না, আমরা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকব। কিংবা ক্ষমতায় থাকতে যেসব করা দরকার, সেগুলো না। ক্ষমতায় থাকা বা আসার বিষয়টি ছেড়ে দিতে হবে জনগণের ওপর।’ এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কারা জনগণের জন্য কাজ করে, জনগণ যাদের চায়, জনগণের ওপরই তাদের আস্থা রাখতে হবে। সেজন্য আমরা চাই, সেজন্যই আওয়ামী লীগের মতো করব না, যা তারা করেছে। এটাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক ব্যতিক্রম দেখতে পাবেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পার্থক্য সেখানেই খুঁজে পাবেন।’
লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘মারামারি-কাটাকাটি বাদ দিয়ে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দিন। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, যে সরকারে এই সরকারের কোনও ভূমিকা থাকবে না।’
জনগণ বহু আশা নিয়ে ভোট প্রয়োগ করতে বসে আছে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া। তার ভাষ্য, ‘১০ বছর আপনাদের দেখেছে, এখন জনগণ আপনাদের থেকে পরিত্রাণ চায়। নানা হয়রারি থেকে মুক্তি চায়। সারাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য উৎসুক হয়ে বসে আছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ’
বিএনপির চেয়ারপারসনের দাবি, ‘দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। অচল হয়ে গেছে। ১০ বছর গণতন্ত্রহীন অবস্থায় দেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়েছে। দেশে অপরাধ বেড়েছে, নারী নির্যাতন বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জেলখানা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের দিয়ে ভর্তি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘১০ বছরে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছেন। এখন যেটুকু আছে, অন্তত সেটুকু রক্ষা করার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। না হলে আল্লার কাছে জবাবদিহিতা থাকবেই, মানুষের কাছেও থাকবে। এত করুণ পরিণতি হবে, যে আগেও যেমন মানুষ চোখের পানি ফেলেনি, এর চেয়ে করুণ হবে। বরং মানুষ উৎসব করবে।’
বক্তব্য শুরুর আগে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে প্রাথমিক সদস্য ফরম গ্রহণ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এর আগে সঞ্চালনা করছিলেন শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন