সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার আসামীর দাপটে স্কুলে আসেনা শিক্ষিকা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহাকারী শিক্ষিকা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে না এসেই বছরের পর বছর উত্তোলন করছেন বেতন-ভাতা। এযেন মগের মল্লুক এর মতো ঘটনা ঘটছে এখানে। ওই বিদ্যালয়টিতে এই অনিয়ম দীর্ঘদিন যাবত চলছে কিন্তু দেখার কেউ নাই।

জানা গেছে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সিলেট নগরীর কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামী হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদ গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কঠোয় তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ এনে দেয়।

এরপর উপজেলার মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করে নিয়মিত কর্মস্থলে না গিয়ে শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগম তার স্বামী আওয়ামীলীগ নেতা ও সীমান্ত চোরাকারবারীদের গডফাদার হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদের মাধ্যমে প্রভাব সৃষ্টি করতে থাকে।

এমতাবস্থায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ঠ হতে দেখে, ছাত্র অভিভাবক ও স্থানীয়রা মিলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগমকে মোল্লাপড়া স্কুল থেকে বদলি করে ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানোয়।

কিন্তু এই বিদ্যালয়ে এসে যোগদানের পর সাবেক প্রধান শিক্ষক দেবব্রত সরকার (বর্তমানে টাকাটুকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সহযোগীতায় কখনো মেডিকেল ছুটি আবার কখনো মাতৃকালিন ছুটির দেখিয়ে প্রায় ৫-৬ বছর স্কুলে না এসেই বেতন-ভাতা উত্তোলন করতেন ওই প্রভাবশালী শিক্ষিকা।

তবে মাঝে মধ্যে স্কুল পরির্দশন করতে এসে হাজিরা খাতায় সারা বছরের হাজিরা স্বাক্ষার এক সাথে দিয়ে যেতেন শিক্ষিকা মনোয়ারা। আওয়ামীলীগ সরকার পতনসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগমের স্বামী আওয়ামীলীগ নেতা ও সীমান্তে গডফাদার হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা দায়ের করার পরও তোতলা আজাদ ও স্ত্রী শিক্ষিকা মনোয়ারার প্রভাব শেষ হয়নি বরং আরো বেড়ে গেছে।

আরো জানা গেছে- উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্তকর্তা প্রভাবশলী শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগমের স্কুলে উপস্থিত না থাকাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে শোকজ করাসহ এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এই অনিয়মের সমাধান হয়নি। বর্তমানে ওই প্রভাবশালী শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগম সিলেট শহরে অবস্থান করছেন স্কুলে অন্যান্য শিক্ষকরা জানান।

এবিষয়ে জানতে গত বৃহস্পতিবার (১৩ই ফেব্রæয়ারী) দুপুর ৩টায় সরেজমিন ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে ২জন সহকারি শিক্ষিকা, প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরী কাম অফিস সহায়ককে দেখা গেছে। আর প্রভাবশালী শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগমসহ অন্য শিক্ষকদের দেখা যায়নি।

এব্যাপারে ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম অফিস সহায়ক আবুল কাসেম বলেন- আমার চাকুরীর বয়স ১০বছর। এই বিদ্যালয়ে যোগদানের প্রথম দিকে কিছুদিন স্কুলে আসতে দেখেছি মনোয়ারা ম্যাডামকে। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছে জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক স্যার বিস্তারিত বলতে পারবেন।

এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন- আমি যোগদানের পর থেকে মনোয়ারা ম্যাডামের অনিয়ম নিয়ে অনেক প্রতিবাদ করেছি। ওই শিক্ষিকার ঘনঘন ছুটির বিষয় নিয়ে তার স্বামীর সাথে আমার কথা কাটাকাটিও হয়েছে।

শিক্ষিকা মনোয়ার কারণে এই স্কুলে কর্মরত অন্যান্য শিক্ষকরাও তার মতো অনিয়মের সুযোগ নিতে চায়। আমাদের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষিকা মনোয়ারাকে স্কুলে অনুপস্থিত দেখে শোকজ পর্যন্ত করেছেন। ওই শিক্ষিকার কারণে আমার স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন- সহকারি শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগম স্কুলে না এসে সারা বছরই ছুটিতে থাকেন। এই বিষয়ে ওই শিক্ষিকার স্বামী আমাদের শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সব ম্যানেজ করেন।

এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে শিক্ষিকা মনোয়ারার স্বামী আমার ওপর বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ফোন দিয়ে সব সময় বিরক্ত করে। আমি চাই এর সঠিক সমাধান হোক। একটা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্টানে এই ধরণে অনিয়ম থাকলে শিক্ষার মান নষ্ঠ হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামী হাবিব সারোয়ার তোতলা আজাদ ও তার স্ত্রী শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগমের অনিয়মে সহযোগীতা করার বিষয়ে জানাতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল মিয়ার মোবাইল নাম্বারে (০১৭১৮-৬৩৪০০৯) বারবার কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।