সুনামগঞ্জের লাউড়গড় ও চাঁনপুর সীমান্ত চোরাচালানের নিরাপদ রোড! মদসহ ১ জন গ্রেফতার

সুনামগঞ্জের লাউড়গড় ও চাঁনপুর সীমান্তকে নিরাপদ রোড হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করছে চোরাকারবারী ও চাঁদাবাজরা। একাধিক মামলার আসামী ও চিহ্নিত চোরাকারবারীরা নিজেদের সোর্স পরিচয় দিয়ে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করছে কোটিকোটি টাকার বিভিন্ন মালামাল।

এর ফলে লাখলাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তবে মদসহ ১জনকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। কিন্তু সোর্স পরিচয়ধারী ও চিহ্নিত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারের জন্য নেওয়া হয়না জোড়ালো পদক্ষেপ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারতে ৩-৪গজ ভিতর থেকে ২-৩শ লোক দিয়ে ওপেন কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারী ও সোর্সরা।

তারা পাচাঁরকৃত কয়লা ২০-৩০টা মোটর সাইকেল দিয়ে ও পাচাঁরকৃত পাথর শতাধিক ঠেলাগাড়ি দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে সারাদিন পরিবহন করাসহ লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের ২শ গজ সামনে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ২০-৩০টা লড়ি বোঝাই করে দিনরাত অবাধে বালি বিক্রি করলেও বিজিবি কোন পদক্ষেপ নেয়না।

গত ১৫বছর যাবত স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা সিন্ডিকেড তৈরি করে অসহায় শ্রমিকদের ব্যবহার করে ভারত অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথর পাচাঁর করাসহ অবৈধ বালি বাণিজ্য করে অনেকেই হয়েগেছে কোটিকোটি। বর্তমানে এই সীমান্তটি মাদক ও চোরাচালানসহ সোর্স পরিচয়ধারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

তাদের নেতৃত্বে সীমান্ত চোরাচালান করতে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ও বিএসএফের তাড়া খেয়ে জাদুকাটা নদীতে ডুবে ও গুলিতে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। তবে গত শনিবার (১৫ ফেব্রæয়ারী) দুপুরে এই সীমান্তের সাহিদাবাদ এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী জালাল মিয়া (৬০) কে ৯ বোতল মদ ও ১ বোতল বিয়ারসহ বিজিবি গ্রেফতার করেছে।

কিন্তু সোর্স পরিচয়ারী ও চিহ্নিত চোরাকারবারীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে এবং বন্ধ হয়নি অবৈধ কয়লা, পাথর পাচাঁরসহ রমরমা বালি বাণিজ্য।

অন্যদিকে গতকাল রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) রাত ১২টা থেকে আজ সোমবার (১৭ ফেব্রæয়ারী) ভোর পর্যন্ত পাশে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, কড়ইগড়াসহ বারেকটিলার আনন্দপুর ও ১২০৩পিলার সংলগ্ন বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ও কাঠাল বাগান দিয়ে প্রায় কোটি টাকার ফুছকা, বিড়ি, চিনি, মদ ও কম্বলসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে।

সোর্স পরিচধারীরা পাচাঁরকৃত প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ১৫০টাকা, পুলিশের নাম ভাংগিয়ে ১শ টাকা, চিনি প্রতিবস্তা বিজিবি ১শ টাকা, পুলিশ ৫০টাকা, প্রতি খাঁচা নাসিরউদ্দিন বিড়ি বিজিবি ১হাজার ৫শ টাকা, পুলিশ ১হাজার টাকাসহ অন্যান্য মালামাল থেকে চুক্তি ভিত্তিক চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিদিন ভারত থেকে বিভিন্ন মালামাল ওপেন পাচাঁর করছে।

এছাড়াও এই সীমান্তে নয়াছড়া, গারোঘাট ও রজনী লাইন এলাকা দিয়ে অবাধে কয়লা পাচাঁর করে পাশের টেকেরঘাট সীমান্তের জয়বাংলা বাজারের ১৫-২০টি ডিপুতে নিয়ে ওপেন মজুত করে বিক্রি করছে।

আরো জানা গেছে- বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা ও টেকেরঘাট সীমান্তের পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়েসহ নীলাদ্রী লেকপাড়, বুরুঙ্গা ছড়া, রজনী লাইন এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে কয়লা ও মাদক পাচাঁর শুরু হয়, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।

পাচাঁরকৃত শতশত মেঃটন কয়লা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নীলাদ্রী লেকপাড়, কয়লার ঘাট অবস্থিত ২০-৩০টি ডিপুতে ওপেন মজুত করার পর, পাচাঁরকৃত প্রতি বস্তা কয়লা থেকে পুলিশের নাম ভাংগিয়ে ৫০টাকা, বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ১শ টাকা, সোর্স বাবদ ৫০টাকাসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নামে ৫০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে সোর্স পরিচয়ধারীরা।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল জাকারিয়া কাদির বলেন- মদসহ আটককৃত ব্যক্তিকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। মাদকসহ চোরাচালান প্রতিরোধ করার জন্য সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারী ও টহল তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।