সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে ৫ কোটি টাকার মালামাল জব্দ

বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়নের কর্মরত জোয়ানরা পৃথক অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্ত থেকে ৫ কোটি টাকার বিভিন্ন পন্য সামগ্রী ও মাদকসহ যানবাহন জব্দ করেছে। এই ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে অবৈধ মালামাল আটক করছে।

কিন্তু ২৮ ব্যাটালিয়নের সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে গত ২দিনে আসা অবৈধ মালামাল আটকের কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে এসব সীমান্তে দিয়ে প্রতিদিন পাচাঁরকৃত কোটিকোটি টাকার অবৈধ মালামাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা লাখলাখ টাকা করেছে চাঁদাবাজি বলে খবর পাওয়া গেছে।

তাই সীমান্তের চোরাচালানের সাথে জড়িত প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিরাসহ চোরাকারবারী ও সোর্সদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব ও সেনা বাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে- গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩শে জানুয়ারী) রাত থেকে আজ শুক্রবার (২৪শে জানুয়ারী) সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৮ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে থাকা সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্তের বাংলা বাজার, শ্রীপুর, লবিয়া, কালা সাদেক, সোনারহাট, লাফার্জ, দমদমিয়া, বিছনাকান্দি ও সংগ্রাম বিওপির বিজিবি জোয়ানরা পৃথক অভিযান চালিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে ৫ কোটি ২২ লাখ ১৬ হাজার ৭শ টাকার বিভিন্ন পন্য সামগ্রী, চিনি, গরু, মহিষ, জিরা, কম্বল, কমলা, ফুছকা, মাছ ও মাদকদ্রব্যসহ সিএনজি চালিতো অটোরিক্সা ও মোটর সাইকেল জব্দ করেছে।

অন্যদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারী) ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তে ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪ গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা।

এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারী) রাত ১২টার পর থেকে আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারী) সকাল ৬টা পর্যন্ত শতাধিক বারকি নৌকা বোঝাই করে জাদুকাটা নদী দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, জিরা, বিড়ি ও মাদকদ্রব্যসহ কসমেটিকস পাচাঁর করেছে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা।

অন্যদিকে একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর ও ১২০৩ পিলার এলাকা দিয়ে ২শতাধিক লোক দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৫০-৬০লাখ টাকার ফুছকা, জিরা, কম্বল, বিড়ি ও মদ পাচাঁর করে শিমুল বাগানে সামনে নিয়ে অটোরিক্সা বোঝাই করে বাদাঘাট বাজার, বারহাল, কামড়াবন্দ ও শিমুলাতলাসহ লাউড়গড় বাজার ও ঢালারপাড় গ্রামের নিয়ে মজুত করা হয়।

এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ টাকার মালামাল ওপেন পাচাঁর হচ্ছে। এছাড়াও গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩শে জানুয়ারী) ভোর রাত ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চারাগাঁও সীমান্তের জংড়লবাড়ি, কলাগাঁও মাইজহাটি, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে পাচাঁরকৃত প্রায় ২হাজার মেঃটন কয়লা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত ১০/১৫টি ডিপুতেসহ সোর্স পরিচয়ধারীদের বসতবাড়ি উঠানে ও পাথরঘাট নিয়ে নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যায়।

এই সীমান্ত দিয়ে কয়লা ও মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর করা হলেও দেখার কেউ নাই। অথচ সুনামগঞ্জে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান ও তাহিরপুর থানায় ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার কর্মরত থাকাকালীন সময় অবৈধ কয়লা, চুনাপাথর, কসমেটিস, ফুছকা, ঘোড়া, গরু, বিড়ি, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্যসহ অর্ধশতাধিক চোরাকারবারী ও জুয়ারীদের গ্রেফতার করেছেন।

এব্যাপারে শুল্ক স্টেশনের একাধিক বৈধ ব্যবসায়ীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- বিজিরি ও পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে তাদের সোর্স পরিচয়ধারীরা সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীদের নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখলাখ টাকার কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করলেও কোন পদক্ষেপ নেয়না। এরফলে শতশত বৈধ ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে।

একই ভাবে কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর হচ্ছে পাশের বালিয়াঘাট ও টেকেরঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, হাইস্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়েসহ নীলাদ্রী লেকপাড়, বড়ছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, রজনী লাইন, চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, গারোঘাট, রাজাই, কড়ইগড়া এলাকা দিয়ে।

এব্যাপারে জব্দকৃত মালামাল ও সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে ৪৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোঃ হাফিজুর রহমান (পিএসপি) সাংবাদিকদের জানান- সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ করার জন্য এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সীমান্ত অনিয়মের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।