সুনামগঞ্জ সীমান্ত চোরাচালান: আবারো ৪৫ লাখ টাকার মালামাল জব্দ

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা সীমান্তে বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত কিংখ্যাত সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীরা চোরাকারবারীদের নিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করছে কোটিকোটি টাকার পন্য-সামগ্রী।

কিন্তু সীমান্ত চোরাচালানের মূলহুতা সোর্সরা পরিচয়ধারীরা অবৈধ বাণিজ্য করে কোটিপতি হলেও তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। তবে বিজিবি অভিযান চালিয়ে আবারো ৪৫ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্ভর) ভোর থেকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩এর ৩এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩-৪শ গজ ভিতর থেকে ২ থেকে ৩শ লোক দিয়ে অবৈধ ভাবে লাখলাখ টাকার কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু হয়।

এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পাচাঁরকৃত পাথর ঠেলাগাড়ি দিয়ে ও পাচাঁরকৃত কয়লা মোটর সাইকেল দিয়ে পরিবহণ করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে লাউড়গড় বাজারে চারপাশে মজুত করে স্থানীয় চোরাকারবারীরা।

অন্যদিকে এই সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে গতকাল বুধবার (১৬ই ডিসেম্ভর) সন্ধ্যায় থেকে ২-৩শ বারকি নৌকা দিয়ে ভারত থেকে সোর্স পরিচয়ধারীরা কয়লা ও পাথরসহ মদ, কমলা, কম্বল, চিনি, নাসির উদ্দিন বিড়ি, কসমেটিক ও বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করে শুরু করে।

একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর, ১২০৩পিলার, কড়ইগড়া, রাজাই, নয়াছড়া ও রজনী লাইন এলাকা দিয়ে সোর্স বাহিনী প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুছকা, চিনি, জিরা, কিচমিচ, কম্বল, কমলা, আলু, নাসির উদ্দিন বিড়ি, মদ ও গরুসহ কয়লা পাচাঁর করে। আর এই পাচার আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়াও টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গা এলাকা দিয়ে চুনাপাথর ও নীলাদ্রী লেক পাড়, পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়ে কয়লা পাচাঁর করে নিলাদ্রী লেকপাড় ও জয়বাংলা বাজারের পাশে মজুত করাসহ বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করে শতাধিক লোক দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধেরআউটা গ্রামে নিয়ে ওপেন মজুত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে একই ভাবে চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা, এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও মাইজহাটি ও জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের আশেপাশে একাধিক ডিপুসহ সোর্সদের বাড়ির উঠানে মজুত করা হয়। আর এই চোরাচালান বাণিজ্য প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় চলে রাতভর।

এদিকে গতকাল বুধবার (১৮ই ডিসেম্ভর) পৃথক অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ন তলা সীমান্তের কামারভিটা ও শহীদ মিনার এলাকায় মালিকবিহীন অবস্থায় পাচাঁরকৃত ৪০লাখ ২৫হাজার ৩শ টাকা মূল্যের ভারতীয় সিঙ্গানীয়া ফ্যাব্রিকের থান কাপড়, কসমেটিকস ও মদ জব্দ করেছে বিজিবি। এছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি, বনগাঁও, ডলুরাসহ তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও, লাউড়গড় সীমান্ত থেকে মোট ৫লাখ ১০হাজার ৪৫০টাকা মূল্যের গরু, চিনি, কম্বল, সুপারী ও কয়লা জব্দ করা হয়েছে।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক একে এম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান- রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাচারকৃত ৪৫লাখ ৩৫হাজার ৪৫০টাকার জব্দকৃত মালামাল শুল্ক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।