এনবিআর - আত্মা প্রাক-বাজেট সভা
সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি চায় আত্মা
তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় নিম্নস্তরের দশ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণসহ সকল তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। বাজেটকে সামনে রেখে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়। প্রাক-বাজেট বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সভায় আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয় দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ৯,২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে এবং ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ও ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে প্রায় একইরকম রয়েছে। করের ভিত্তি এবং করহার খুবই কম হওয়ায় সিগারেট, বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল) অধিক সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান তামাক কর অত্যন্ত জটিল যা মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে যথেষ্ট নয়। ফলে বিদ্যমান তামাক কর ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছেনা। বাংলাদেশে এখনও প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হয় এবং তামাকাসক্তরাও বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়। প্রাক-বাজেট সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আত্মা’র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন শাহনাজ মুন্নী, প্রধান বার্তা সম্পাদক, নিউজ টুয়েন্টিফোর; মনির হোসেন লিটন, অ্যাডিশনাল চিফ নিউজ এডিটর, একাত্তর টেলিভিশন; মর্তুজা হায়দার লিটন, চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট, বিডিনিউজ২৪.কম এবং কনভেনর, আত্মা; নাদিরা কিরণ, নিউজ এডিটর, এটিএন বাংলা ও কো-কনভেনর, আত্মা এবং মিজান চৌধুরী, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক যুগান্তর ও কো-কনভেনর, আত্মা। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয় যে অনেক বেশি তা আমরাও জানি। কর ও দাম বৃদ্ধির সাথে আরও অন্যান্য বিষয় জড়িত। তবে আমরা চাই তামাক ব্যবহার কমে আসুক। অন্যান্য খাত থেকে আমাদের রাজস্ব আসবে। সবদিক ভেবেই আত্মা’র প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হবে।’প্রাক-বাজেট সভায় নিম্নোক্ত দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়:
বাজেট প্রস্তাব:
1| সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা
– নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা;
– মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা;
– উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা; এবং
– প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
2| ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা
– ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং
– ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
3| জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০%) প্রচলন করা
– প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং
– প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
4| সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
উল্লিখিত তামাক-কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের ৯,২০০ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এই বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে আত্মা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন