সুন্দরবনের ফরেস্ট স্টেশনের লুটতরাজদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পাহারা

সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের কাছ থেকে জব্দ করা নৌকা লুট করার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ফরেস্ট স্টেশনের সামনে অবস্থান নেন এবং রাতভর পাহারা দেন।

কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘গতকাল দুপুরে একদল লোক ফরেস্ট অফিসে এসে জব্দ নৌকাগুলো নিয়ে যাবে বলে জানায়। তারা হুমকি দিয়ে বলে যায়, “রাতে এসে নৌকা নিয়ে যাব। দেখি আমাদের কে ঠেকায়?” আমি তাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা সরকারি সম্পদ এভাবে দেওয়া যায় না। মধ্যরাতে ৩০–৪০ জন এসে ফরেস্ট স্টেশনের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করে। আমাদের এখানে জনবল কম। পরে স্থানীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কাছে ফোনে বিষয়টি জানাই। তাঁরা এসে দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কোস্টগার্ডের একটি দল স্টেশনে এসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।’

কয়রা উপজেলায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ফরেস্ট কর্মকর্তার ফোন পেয়ে মধ্যরাতে আমরা সেখানে যাই। দেখি, এলাকার বহুলোক সেখানে নৌকা লুট করতে এসেছে। আমাদের দেখে সবাই চলে যায়। রাতভর আমরা বন বিভাগের অফিস পাহারা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের অনেক দল পাড়া-মহল্লায় রাত জেগে পাহারা দিয়েছে মানুষের নিরাপত্তার জন্য।’

সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনের নদ-নদী ও খাল থেকে মাছ, কাঁকড়া, গোলপাতা ও মধু সংগ্রহ করেন বনজীবীরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পাস না নিয়ে অবৈধভাবে নৌকা নিয়ে বনে প্রবেশ করেন। তাঁদের আটক করে বন বিভাগ। আটকের পর কিছু নৌকার তলা নষ্ট করে দেওয়া হয়, যাতে এ নৌকা নিয়ে আবার অবৈধ প্রবেশ করতে না পারে। আবার অনেক সময় নৌকা ফেলে পালিয়ে যায় অপরাধীরা। জব্দ করা নৌকাগুলো এনে রাখা হয় নিকটতম টহল ফাঁড়ি ও ফরেস্ট স্টেশনে। কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে শতাধিক জব্দ নৌকা রয়েছে।

সুন্দরবনের নদ-নদী ও খাল থেকে মাছ, কাঁকড়া, গোলপাতা ও মধু সংগ্রহ করেন বনজীবীরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পাস না নিয়ে অবৈধভাবে নৌকা নিয়ে বনে প্রবেশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, কেউ যাতে সহিংসতা করতে না পারে, এ জন্য শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে মন্দির পাহারা দিয়েছেন। আমি রাতে কয়রা উপজেলার পরিষদে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের কর্মীদের কেউ কোথাও হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।