সুন্দরবনে আটটি বাঘ বেড়ে যাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ
বন বিভাগের করা এবারের জরিপটি কার্যত পরিচালনা করেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাই এবং এই প্রথম বাংলাদেশের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ করলো।
আর দু বছর ধরে বন বিভাগ ও বাঘ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে করা জরিপের ফল অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এখন ১১৪টি।
জরিপের জটিল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ড: আব্দুল আজিজ।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ২০১৫ সালের বন বিভাগের জরিপে ১০৬টি বাঘের সংখ্যা পাওয়া গেলেও এবার তারা ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব পেয়েছেন।
ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনকে খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অংশে ভাগ করে প্রায় দু বছর ধরে এবারের জরিপটি চালানো হয়েছে।
৪৯১ টি ক্যামেরা ২৪৯ দিন চালু থেকে প্রায় আড়াই হাজার ছবি তুলেছেন যেগুলো পরে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পর্যালোচনা করেছেন।
অধ্যাপক আব্দুল আজিজ বলছেন ২০১৫ সালে যে ১০৬টি বাঘের সংখ্যার কথা বলা হয়েছিলো সেটি ছিলো খুবই বিস্ময়কর সংবাদ কারণ এর আগের জরিপে বাঘের সংখ্যা তিনশর বেশি বলা হয়েছিলো। সেখান থেকে ১০৬-এ নেমে যাওয়াটা ছিলো অনেক বড় ধাক্কা।
“এখন দেখা যাচ্ছে তিন বছরে আটটি বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে এ সংখ্যা বাড়ার একটি ইঙ্গিত মিলছে”।
আবার এই প্রথম বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ও গবেষকরাও এ জরিপ পরিচালনা ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ করেছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বাঘ ব্যবস্থাপনার জন্য, বলছেন তিনি।
আরেকজন বাঘ বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন সুন্দরবনের বাঘের প্রকৃত সংখ্যা কত সেটা জানাটা খুবই কঠিন। ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে যে সংখ্যা বেরিয়ে এসেছে সেটি একটা গড়পড়তা হিসেব।
“বাঘের সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। তবে এবার যে সংখ্যা বেরিয়ে এসেছে তাতে এটুকু বলা যায় যে বাঘের সংখ্যা কমেনি। যদিও বেড়েছে বলা যাবে কি-না জানিনা”।
মিস্টার খান এই যে বাঘের সংখ্যা অন্তত কমে যায়নি সেটিই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বড় অর্জন।
“এই যে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে একটি সংখ্যা পাওয়া গেলো এবং তাতে দেখা যাচ্ছে আগের হিসেবের চেয়ে কমেনি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর আগে মনে করা হচ্ছিলো যে বাঘের সংখ্যা কমতির দিকে। সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে”।
মিস্টার খান অবশ্য বলেন এ নিয়ে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই কারণ বাঘের জন্য প্রধান যে হুমকি সেই চোরাশিকারীর সমস্যা বিদ্যমান আছে। আবার সুন্দরবনের আশেপাশে শিল্পায়ন হচ্ছে, এমনকি ভেতরে দূষণের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
“বাঘ সংরক্ষণ একটি চলমান কার্যক্রম এবং সেটি আরও জোরদার করতে হবে। টাইগার অ্যাকশন প্লান আপডেট করা হয়েছে এবং সেখানে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কি করনীয় সেটাও বলা আছে। এগুলো ঠিকমতো অনুসরণ করলে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে”।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন