‘সূর্য অভিযানে’ রওনা হলো নাসার নভোযান
সূর্যের রহস্য ভেদের এক মিশন নিয়ে পার্কার সোলার প্রোব নামে একটি উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা।
নির্ধারিত সময়ের একদিন পর ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল নাসার নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হলো। এটি সূর্যের ৬০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যে গিয়ে পৌঁছাবে এবং সূর্যের এত কাছাকাছি এর আগে কোন যানই যেতে পারে নি।
সূর্যের যে উজ্জ্বল আলোকছটার অংশটি সূর্যগ্রহণের সময় দেখা যায় – যাকে বলে ‘করোনা’, এই যানটি তার ভেতর দিয়ে উড়ে যাবে।
বলা হচ্ছে, ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে প্রোবের।
চারটি ডেল্টা-ফোর রকেট দিয়ে উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ‘প্রোব’ কে উৎক্ষেপণের কথা ছিল শনিবার সকালে। তবে শেষ মূহুর্তে বাড়তি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তা ১৪ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
অবিশ্বাস্য গতির নভোযান
সাত বছর ধরে সূর্যের চারদিকে ২৪ বার প্রদক্ষিণ করবে এই স্যাটেলাইট। সে সময় এটির গতি হবে ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬৭০,০০০ কিলোমিটার। ৬০ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে।
এই প্রকল্পের অন্যতম বিজ্ঞানী ড. নিকি ফক্স বলেছেন, “আমি বুঝতে পারছি ৬০ লাখ কিমি দূরত্বকে কখনই নিকট দূরত্ব বলে মনে হবেনা, কিন্তু যদি ধরে নেয়া হয় ভূপৃষ্ঠ এবং সূর্যের দূরত্ব এক মিটার, তাহলে প্রোব সূর্য থেকে মাত্র ৪ সেমি দূরে থাকবে।”
প্রোব যে গতিতে চলবে তা নজিরবিহীন। ড ফক্স বলছেন,”এত দ্রুতগতির কোনো কিছু আগে তৈরি হয়নি। সূর্যের চারদিকে এটি প্রতি ঘণ্টায় ৬৯০,০০০ কিমি পর্যন্ত গতিতে ঘুরবে। অর্থাৎ এই গতিতে নিউইয়র্ক থেকে টোকিও যেতে লাগবে এক মিনিটেরও কম সময়।”
বলা হচ্ছে, মনুষ্য-বিহীন এই নভোযান, যেটি একটি স্যাটেলাইটের মত কাজ করবে, তা সূর্যের যতটা কাছে যাবে এর আগে মানুষের তৈরি কোন যান এত কাছে যায়নি।
সূর্যের চারদিকে উজ্জ্বল আভাযুক্ত যে এলাকা, যেটি ‘করোনা’ নামে পরিচিত, সরাসরি সেখানে গিয়ে ঢুকবে এই স্যাটেলাইট। তারপর সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে করতে বোঝার চেষ্টা করবে এই নক্ষত্রের আচরণ।
কেন এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ?
সূর্য কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে সাহায্য করবে পার্কার নামের এই স্যাটেলাইট।
সূর্য তার বৈদ্যুতিক বিভিন্ন কণা এবং চৌম্বক শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবসময় প্রভাবিত করছে। এই ‘সোলার উইন্ড’ বা সূর্য থেকে নিঃসরিত বাতাসের প্রভাবে উত্তর মেরুর আকাশে তৈরি হয় অদ্ভুত সুন্দর রংচঙে আলোর খেলা।
কিন্তু সূর্যের কিছু প্রবাহ পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির ভারসাম্য বিঘ্নিত করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে, মহাকাশে স্যাটেলাইটগুলো কক্ষচ্যুত হতে পারে, এমনকি বৈদ্যুতিক গ্রিড বিকল হয়ে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা সেই সব বিপদ আগে থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন। পার্কার আগাম তথ্য দিয়ে এ কাজে দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে।
কেন সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়া দরকার?
‘করোনা’ বা সূর্যের চারদিকের উজ্জ্বল আভাযুক্ত যে এলাকা সেটির অদ্ভুত আচরণ বিজ্ঞানীদের কাছে বড় রহস্য।
সূর্যপৃষ্ঠের চেয়ে করোনার তাপমাত্রা বেশী। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যেখানে ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মত, করোনা অঞ্চলের তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি হতে পারে।
কেন এই ফারাক – তার সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে নেই।
এছাড়া, সূর্য থেকে নিঃসরিত বাতাস যখন করোনায় প্রবেশ করে, তখন তার গতি হঠাৎ তীব্রভাবে বেড়ে যায়। এই গরম বাতাস তখন প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ কিমি বেগে সোলার সিস্টেমের ভেতর দিয়ে ধেয়ে চলে।
পার্কার করেনার বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কীভাবে টিকে থাকবে পার্কার?
এখন থেকে ৬০ বছর আগে প্রথম সূর্যের কাছাকাছি নভোযান পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
কিন্তু সূর্যের কাছে পাঠানোর জন্য যে ধরণের নভোযান তৈরির প্রয়োজন সেই প্রযুক্তি এতদিন পরে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন।
সোলার চালিত এই নভোযানের যন্ত্রপাতি থাকবে ৪.৫ ইঞ্চি পুরু কম্পোজিট কার্বনের আবরণে দিয়ে মোড়া। ফলে ভেতরের তাপমাত্রা সবসময় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতরে থাকবে। রক্ষা পাবে ভেতরের যন্ত্রপাতি এবং কম্প্যুটার।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন