সেই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চায় সুলতানা জেসমিনের পরিবার
র্যাবের হেফাজতে নওগাঁর ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধানে হাইকোর্টের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তার পরিবার।
বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে হাইকোর্টের বেঞ্চ থেকে এ নির্দেশ দেওয়ার পর বিকালে নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনের মামা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলার নাজমুল হক মন্টু একথা বলেন। এ সময় তার পাশে সুলতানা জেসমিনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একমাত্র ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
নাজমুল হক মন্টু বলেন, “হাই কোর্টের রুল জারি করায় আমরা সন্তোষ্ট। আগেই বলেছিলাম, আমরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। আজ আমরা পারিবারিকভাবে বসবো।
“যদি হাইকোর্টের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে র্যাবের কাছে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগকারী রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এনামুল হককে সম্পৃক্ত করা না হয় সেক্ষেত্রে আমরা তার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে একটি মামলা করার চিন্তা করব।“
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ তদন্ত কমিটিতে জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলেছে। এ নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বাস্তবায়ন করতে বলেছে আদালত।
তদন্ত শেষ করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
সুলতানা জেসমিনের মামা বলেন, “এই দীর্ঘ সময়ের কারণে চলমান কার্যক্রম যেন স্থবির হয়ে না পড়ে এটাই আমরা আশা করছি।”
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র্যাব আটক করে সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী জেসমিনকে।
আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২৪ মর্চ সেখানে তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের অভিযোগ, র্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব বলছে, ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাইকোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করে। র্যাবের কে কে জিজ্ঞাসাবাদে ছিল, তাও জানতে চায়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক বলেন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ‘মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ’। জেসমিনকে আটকের পর তাকেসহ আরও এক যুবককে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হলে ঢাকায় বাহিনীটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল। এই অভিযোগে সেই সচিবের উপস্থিতিতে আটক করা হয় তাকে। পরে জেসমিনকে আটকের অভিযানে থাকা ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে ২৮ মার্চ এই রিট মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
জনস্বার্থে করা ওই রিট মামলায় স্বরাষ্ট্র সচিব, র্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার কমিটি করার আদেশ দেয় হাই কোর্ট।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন