সেতুর কারণে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে : প্রধানমন্ত্রী
দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিস্তা ও তিতাস এই দুটি সেতু নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় মানুষের দারিদ্র্য হ্রাস পাবে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, এলাকার সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে। ’
রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার পর গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুটি সেতুর উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় লালমনিরহাটের কাকিনা-মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর নবনির্মিত ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু’ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তিতাস নদীর উপর নির্মিত ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু’–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন তিনি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আপামর জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হয়েছিল মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের ভাগ্যের, যারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল তারাসহ কিছু মানুষের জীবনের উন্নয়ন হয়েছিল। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবেনি, তারা দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন সমস্যায় নিমজ্জিত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রায় ছয় বছর পর আমি দেশে আসি। ১৯৭৫ সালের পর আমাকে দেশে আসতে দেওয়া হতো না। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। একপর্যায়ে একরকম জোরকরেই আমি দেশে ফিরেছি। এরপর সারাদেশ ঘুরেছি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা জাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ শুরু করি। তখন থেকেই সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
গঙ্গাচড়ার সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সেতুটির কারণে ঢাকা আসতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে এবং ওই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। কুড়িগ্রাম থেকে লালমনিরহাট হয়ে আমরা রেল যোগাযোগও স্থাপন করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা। সেখানে সবসময় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত। ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ২০০৮ সালে আমরা আবার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসি। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় আছি। এখন কোথাও মঙ্গা নেই। আমরা রিসার্চ করে করে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করতে শুরু করি। এই অঞ্চলে (উত্তরাঞ্চলে) আমরাই প্রথম ভুট্টা চাষের জন্যে প্রজেক্ট করি। আমি বলতে পারি, গত সাড়ে ৯ বছরে কেউ মঙ্গা শব্দটি শোনেনি। উত্তরবঙ্গের লোক মঙ্গা শব্দটি ভুলেই গেছে।’
বাঞ্ছারামপুরের সেতুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই সেতু নিয়ে কয়েকটি উপজেলার মানুষের মধ্যে ঝগড়া ছিল। এরপর আমি সবাইকে ডাকলাম। ম্যাপ নিয়ে বসলাম। এরপর ডিজাইন চেঞ্জ করে দিয়ে আমি নতুন করে বললাম- সেতুর একটা অংশ বাঞ্ছারামপুর থেকে চলে যাবে মুরাদনগর, আরেকটা অংশ চলে যাবে হোমনায়। তাহলে সেতুটি দেখতেও অন্যরকম হবে, যা এখন ওয়াই সেতু নামে পরিচিতি পেয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলার কালেক্টরেট মাঠে এক বিশাল জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উদ্বোধন করেন। ২০১৪ সালের ৩১ জুন নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দুই দফায় সময় বৃদ্ধি করে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শেষে লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নিকট হস্তান্তর করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কন্সট্রাকশন-ডব্লিউএমসিজি। এছাড়া আলাদা প্রজেক্টের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তিস্তা সেতুর উত্তরপ্রান্ত থেকে লালমনিরহাটের কাকিনা মোড় পর্যন্ত ৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৩টি কালভার্ট ও ২টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। অপরদিকে শেখ হাসিনা তিস্তা সেতুর দক্ষিণপ্রান্ত থেকে রংপুরের বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ১টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে, বাঞ্ছারামপুরের প্রায় ৭৭১ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে। সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সেটি চালু হওয়ার মাধ্যমে বাঞ্ছারামপুর, কুমিল্লা জেলার হোমনা, মুরাদনগর এলাকার অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ উপকৃত হবে বলে জানা গেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন