স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকার তিন ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। যুগোপযোগী স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা প্রণয়নে শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালকের আশ্বাসে এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
বাজুসের সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে দুই দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
এসব দাবির মধ্যে ছিল সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের হয়রানিমূলক অভিযান বন্ধ এবং ব্যবসাবান্ধব স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা জারি।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভাশেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাজুস। আর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বড় শপিংমল এবং বড় মার্কেটগুলোতে স্বর্ণের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়।
জানতে চাইলে বাজুসের সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, আমরা ২৫ বছর পর্যন্ত স্বর্ণের নীতিমালা দাবি করে আসছি। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নীতিমালা থাকলে স্বর্ণের ব্যবসায় স্বচ্ছতা বাড়তো।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা আমদানি করে। আর ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে পণ্য কিনে অলংকার তৈরি করে বিক্রি করে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয়। এতে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা উভয় লাভবান হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বর্ণের নীতিমালা থাকা অত্যন্ত জরুরি। আর ধর্মঘট দীর্ঘ হলে অর্থনীতিতে পুরো ব্যবসা বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা নীতিমালার যে দাবি করছে, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ নীতিমালা ছাড়া কোনো ব্যবসায়ই স্বচ্ছতা থাকে না। এছাড়া আমদানি প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পক্ষে মত দেন তিনি।
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিনা নোটিশে বৃহস্পতিবার আমিন জুলেয়ার্সে অভিযান চালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারকে আটক করা হয়। এই ধরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে সোনার চাহিদা প্রায় ২১টন। কিন্তু বৈধভাবে কোনো সোনা আমদানি হয় না। আর স্বর্ণের আমদানির প্রক্রিয়া একটু জটিল। স্বর্ণ আমদানি করলে অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যাংকেরও অনুমোদন লাগে। আর অনুমোদন নিতে গেলে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। সব মিলিয়ে চোরাই পথে আনা সোনা দিয়েই বাংলাদেশে বেশিরভাগ ব্যবসা চলছে। বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন দফতরসহ ও সংশ্লিষ্ট সব মহলই জানে। কিন্তু এর আগে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক রাজধানীর বনানীতে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের ধর্ষণের ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সোনা আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এসব প্রতিষ্ঠানটির ৫টি শো রুম বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান আমিন জুয়েলার্সে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা। এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেয় বাজুস।
এদিকে জব্দ করা সোনার নিয়মিত নিলাম ডাকা এবং সোনা আমদানি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান স্বাক্ষরিত এক চিঠি বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বৈধভাবে সোনা সরবরাহের জন্য বাজুস দাবি করে আসছে। এজন্য বিভিন্ন সময় তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। দেশে বৈধভাবে সোনা আসার আর কোনও উৎস না থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন