স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও পাননি রোকেয়া বীরাঙ্গণা উপাধি! ইটভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ
দেশ স্বাধীনের ৫০ বছরেও পাইনি কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বীরাঙ্গণা রোকেয়া বেওয়া। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য নারীদের বীরাঙ্গণা উপাধি দেন।
কিন্তু ৫০ বছরে সেই স্বীকৃতি পাননি অনেক বীরাঙ্গণা নারী! তেমনি একজন নাটোরের লালপুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের হায়াত মালিথার কন্যা ইটভাটা শ্রমিক বীরঙ্গাণা নারী রোকেয়া বেগম রাকিয়া (৬৭)। মুক্তিযুদ্ধের পর সম্মানহারা নারীদেরকে বীরাঙ্গণা নামে অবিহিত করা হয়।
এখন কার অনেক ছেলে-মেয়ে জানে না বীরাঙ্গণা মানে কি? যাদের ভূমিকা দেশ স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ছিলো। বীরাঙ্গণা বলতে আমরা ধর্ষিতা নারীকে বুঝায় কিন্তু বীরাঙ্গণা অর্থ একটি দেশের জন্য যে নিজের সম্মান ত্যাগ করেছে, সেই নারীকে বীরাঙ্গণা বোঝায়, যিনি বীরের মতো ত্যাগ করেছেন। সীমাহীন দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা এবং মানবেতর জীবনযাপনের ৫০ বছর। সমাজে লজ্জা অপমান মাথায় নিয়ে দীর্ঘ দিন পাড়ি দিয়েছেন ৫০ বছর।
সরেজমিন রামকৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটায় রোকেয়া বেগম পুরুষদের সঙ্গে মাটি টানার কাজ করছেন। বয়সের কারণে কাজ করতে কষ্ট হলেও পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে এমএইএ ইটভাটার মালিক মো. হাসেম আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রোকেয়া ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। রোকেয়ার পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২০ জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরের লালপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম রামকৃষ্ণপুরে অতর্কিত ঢুকে ৫জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। এ ছাড়া তারা বাড়িঘর লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়। অস্ত্রের মুখে মা-বোনদের নির্যাতনে মেতে ওঠে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রোকেয়ার বয়স ছিল ১৭ বছর। বছরের পর বছর ধরে রোকেয়া বাবা-মা, ভাই-বোনের সামনেই সম্ভ্রম হারানোর মানসিক কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন।’ রোকেয়ার ভাই আজহার আলী বলেন, ‘বাবা-মা অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও কোনো লাভ হয়নি। তাঁদের সামনেই বোনকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে মা ও বাবা দুজনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এ ঘটনার কয়েক দিন পর পরিবারের সবাই বন্যার পানিতে সাঁতরে বাথান বাড়ি ও রগমারী হয়ে ভারতের জলঙ্গিতে চলে যায়। সেখানে কলিমপুর শরণার্থীশিবিরে ৫ মাস থাকার পর দেশে ফিরে আসি।
এরপর স্বাধীনতার দেড় বছরের মাথায় নিমতলীর ছইর মোল্লার ছেলে ছোয়াহার সঙ্গে রাকিয়ার বিয়ে হয়। কিন্তু যুদ্ধকালীন ঘটনা জানার পর স্বামী তাঁকে তালাক দেন। এরপর বুধপাড়া গ্রামের আজিজ শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এই স্বামী মারা গেলে গোপালপুর (মাধবপুর) গ্রামে দিনমজুর সন্তানের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে ইটভাটায় কাজ করে জীবন যাপন করছেন বীরাঙ্গণা রোকেয়া বেওয়া।
আজহার আলী আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৫ মে লালপুর-গোপালপুর সড়কের শিমুলতলা নামক স্থানে রোকেয়ার বড় ভাই টমটমচালক (ঘোড়ার গাড়ি) হাবিবুর রহমানসহ গাড়িতে থাকা ৬জন যাত্রীকে পাকিস্তানী বাহিনী গুলি করে হত্যা করে।’ রোকেয়া বেগম রাকিয়া বলেন, ‘বীরাঙ্গণার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছি কয়েকবার। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। স্বীকৃতি পেলে সব কষ্ট ভুলে থাকব।’
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব বলেন, ‘বীরাঙ্গণা রোকেয়া বেগম রাকিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, ‘বীরাঙ্গণার স্বীকৃতির জন্য রোকেয়া বেগম রাকিয়ার আবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন