সড়কেই শেষ ছুটির অর্ধেক!
পবিত্র ঈদ-উল আজহার ছুটি তিন দিন। ঘণ্টার হিসাবে তা ৭২ ঘণ্টা মাত্র। বাড়ি যেতে সময় লেগেছে ১৬-১৮ ঘণ্টা। ফিরতেও একই সময় লাগবে। ফলে যাওয়া-আসা করতে ৩২-৩৬ ঘণ্টা লাগবে। ফলে মোট সময়ের অর্ধেকই কাটবে পথে। বেহাল ও খানাখন্দকে ভরা সড়কের কারণে পথেই কাটবে ছুটির অর্ধেক।
দেশে এখন সারা বছরই চলে সড়ক মেরামত, সংস্কার ও নির্মাণের কাজ। বর্ষার শুরুতেই মেরামত ও নির্মাণ কাজ করা হয়, যা বর্ষায় নষ্ট হয়। আবার বর্ষায় সড়ক নষ্ট হয়েছে বলে একই রাস্তার টেন্ডার ডাকা হয়। আবার ঈদের সময়ে সেই সড়কই, ফিরে আসে পুরনো চেহারায়। এভাবেই প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা খরচ করে চলছে দেশের সড়ক মেরামতের কাজে।
স্বাধীনতার পরে আজও হয়নি টেকসই সড়ক নির্মাণ নীতিমালা। যার ফলে একটি সড়ক কয় বছর টিকবে তার হিসাব থাকছে না। ঈদ-উল আযহা উপলক্ষ্যে ফের সড়ক মেরামতের কাজ করা হয়েছে। দুই মাস আগে ঈদ-উল ফিতরের মতো প্রতি বছরই ঈদের পূর্বে বিশাল বাজেট খরচ করে সড়ক মেরামত করা হয়। সেটাও বিফলে গেছে। ফলে ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ঈদের ছুটির অর্ধেকের বেশিই কাটবে পথে বলে দেখা যাচ্ছে। ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ যেমন গ্রামে ফেরার সময়ে হয়েছে, তেমনি ঢাকার ফেরার সময়েও হবে তা বুঝতে বেশি হিসাব কষতে হয় না।
সড়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরে নিয়মিত সড়ক সংস্কারের জন্য ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে জাতীয় বাজেটে। গত বছর খরচ করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এভাবে প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ছে। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ ও মেরামতে ৮৭টি প্রকল্প চলমান আছে। এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা। প্রতি বছরই এই সংস্কারের কাজের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় ঈদ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে। কিন্তু কয়েক মাস পরই তা নষ্ট হয়ে যায়। এখন এই খরচের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সার দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ছয়টি বড় মহাসড়কের মধ্যে সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৬৪ জেলার সড়কগুলো। ঈদের ঘরমুখো মানুষের চলাচলের সময়েই ঢাকায় প্রবেশ করে গরু বোঝাই ট্রাক। কারণ সারা দেশের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি কুরবানি হয় ঢাকায়। ফলে এসময় দুই দিক থেকেই গাড়ির চাপ সমান তালে ছিল।
দেশের প্রধান মহাসড়কগুলো বেহাল। কোথাও সুরকি উঠে গেছে, কোথাও খানাখন্দ। যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন হয়েছে। কোথাও চলেছে ধীরগতিতে। সরকারি হিসাবে, সারা দেশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের(সওজ) অধীন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক আছে ২১ হাজার ১২৩ কিলোমিটার। সওজের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ(এইচডিএম) প্রতিবছর সংস্থাটির অধীনে থাকা সড়কের মান ও অবস্থা জরিপ চালায়। গতবারের জরিপে উঠে এসেছে, মোট সড়কের ৩৯ শতাংশ ভালো, প্রায় ২৪ শতাংশ চলনসই। খারাপ ও খুব খারাপের পর্যায়ে রয়েছে বাকি ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে ৩ হাজার ৭৯০ কিলোমিটার মহাসড়কের ৫৪ শতাংশ ভালো। প্রায় ২৬ শতাংশ সড়ক চলনসই। বাকি ২০ শতাংশ মহাসড়ক খারাপ ও খুব খারাপের পর্যায়ে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের ১৪টি জেলায় প্রায় ৫৩৭ কিলোমিটার মহাসড়কের অবস্থা ভালো নয়। কোথাও কোথাও গর্ত এতটাই বড় যে যানবাহন চলতে গিয়ে এপাশ-ওপাশ কাত হয়ে পড়ছে। মালবাহী ভারী যান বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। এই জেলাগুলো হচ্ছে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, নরসিংদী, সিলেট ও নেত্রকোনা। এর বাইরে সওজ এবার বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরকার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা যায়, বন্যার কারণে দেশের ১৭টি আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক পানিতে নিমজ্জিত ছিল। ৭৩টি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। কোথাও কোথাও ২ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে সওজের একজন দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, এবারের অতিবৃষ্টি ও বন্যার পর চলনসই ২৬ শতাংশ মহাসড়ক আর চলনসই নেই। তা এখন অর্ধেকই খারাপের পর্যায়ে চলে গেছে। কারণ হিসেবে তাদের মতে, টুকটাক যেসব মেরামত করা হচ্ছে, তা টিকছে না। খারাপ আর খুব খারাপ সড়ক এখন কী হয়েছে, তা তো অনুমানই করা যায়। অর্থাৎ মহাসড়কের অর্ধেকই বলা চলে এখন ভাঙাচোরা। আর আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কের অনেকগুলোই এখন বন্যার পানির নিচে।
কোটি মানুষের ঘরে ফেরা
ঈদের ছুটিতে ঢাকার প্রায় সব মানুষই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। ফলে জ্যাম ও যানজটের শহর এখন ফাঁকা। ব্যস্ত সড়কগুলো কিছুটা বিশ্রাম পাচ্ছে। এই পরিমাণ মানুষ ঢাকার বাইরে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসবেন তিন দিনের মধ্যে। ঢাকা থেকে অধিকাংশ মানুষ সড়ক পথের পাঁচ রুটে বাস ও প্রাইভেট কার ও ট্রেন যোগে এবং কিছু সংখ্যক গিয়েছেন বিমানে। এর মধ্যে সড়ক পথেই গিয়েছেন বেশি সংখ্যক মানুষ। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা- চট্টগ্রাম, ঢাকা- সিলেট এই অঞ্চলে মানুষ যাবেন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই রুটগুলোর প্রতিটিতেই মেরামত কাজ চলছে। এর বাইরে শুধু ঈদকে কেন্দ্র কওে কিছু সংস্কার কাজ চলছে। যা গত ঈদ-উল- ফিতরের সময়েও করা হয়েছে। এছাড়ও মেয়াদ শেষ হওয়ায় কিছু সড়কের কাজ চলছে।
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য চান্দিনার পরে ব্রিজ ও সড়ক নির্মাণ চলছে। এজন্য এই জায়গায় স্বাভাবিক সময়ের গাড়ির চাপেই যানজট লেগে থাকে। ঈদ উপলক্ষে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তিন ঘণ্টার দুরত্ব অতিক্রম করতে হয়েছে ৭/৮ ঘণ্টায়। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায়ও চলছে সড়ক মেরামতের কাজ। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলের জায়গাটি সরু হয়ে গেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।
সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ঈদ সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দদিনগুলোতে পড়েছে। ফলে ঈদের ছুটির সঙ্গে সাধারণ কোন ছুটি নেই। তাই গ্রামে গিয়ে ঈদেও পরদিনই চাকরিজীবীরা ঢাকায় ছুটবেন রোববারই। মহাসড়কে কত কিলোমিটার ভাঙাচোরা সেটা বড় কথা নয়। এক কিলোমিটার খারাপ সড়কের জন্যও পুরো মহাসড়ক অচল হয়ে যেতে পারে। আবার যদি কোন গাড়ি বা বাস মাঝপথেই নষ্ট হয়ে যায় বা দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, এখন রংপুর থেকে ঢাকায় বাস আসতে এক দিন লাগে। গাজীপুর থেকে মহাখালী বাস আসতে লেগে যায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। সিলেটে এখন ১০-১২ ঘণ্টা লাগছে। সব মিলিয়ে ঈদে দুর্ভোগ থাকবেই।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল—এই চারটি পথের যাত্রায় ভয়ের মূল কারণ বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ। এর সঙ্গে সড়কে নির্মাণ আর সম্প্রসারণের কাজ যুক্ত হয়ে যানবাহনের গতি কমে তৈরি হচ্ছে যানজট।
ঢাকা থেকে বের হতেই ৩ ঘণ্টা
ঈদের সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটগামী মানুষ। কারণ মতিঝিল, সায়দাবাদ ও যাত্রবাড়ী থেকে শনির আখড়ার দুরত্ব পাঁচ কিলোমিটার হলেও এই পথটুকুর পুরোটাই খনা-খন্দকে ভরা। সড়কটি গত কয়েক বছর ধরেই ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এটির নির্মাণ হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে চলছে নির্মাণ কাজ। ফলে সরু রাস্তায় একটির পিছনে একটি গাড়ি চলছে। যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী অংশের হাঁটু সমান গর্ত। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের সামনের সড়কের একাংশ বন্ধ নির্মাণকাজের জন্য। অন্য অংশের স্থানে স্থানে হাঁটুপানি। এই পথ পার হেতই লেগে যাবে দুই ঘণ্টার বেশি সময়। আর যদি কোন গাড়ির চাকা কাদায় আটকে যায় তাহলে রেকার যাওয়ারও কোন সুযোগ থাকে না। ফলে এই পথটুকুও সুখকর হবে না যাত্রীদের। একই সড়কে রয়েছে মেঘনা-গোমতী সেতুর জট। সেই জট কাটিয়ে উঠতে সময় চলে যাবে অনেক।
অপরদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী অংশ বেহাল। ময়মনসিংহের পর জামালপুর ও নেত্রকোনার পথের মহাসড়কের অবস্থাও ভালো নয়। ঢাকার সঙ্গে দিক্ষণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেতে মাওয়া হয়েই যেতে হবে। ভাঙ্গা এলাকার পরে একটি সড়ক গিয়েছে বরিশালে অপরটি খুলনা-যশোরে। বরিশাল থেকে মাদারিপুরের ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৬ কিলোমিটার সড়কের উজিরপুরের জয়শ্রী থেকে ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের পুরোটাই গর্তে ভরা।
জ্যাম দিয়েই শুরু ঢাকা-সিলেট পথ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি খানাখন্দকের হিসাব করেছে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ২১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটাওে কিছু দুর পরপরই গর্ত রয়েছে। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব অংশে বেশি রয়েছে গর্তগুলো। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল কদমতলী এলাকায় ঢাকাগামী একটি পরিবহনের রাতের পালার চালক ফারুক আহমদ বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে এ অবস্থা। এতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় ঢাকা-সিলেট যাতায়াতে এখন বাড়তি দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ঈদের সময়ে আরও বেড়ে যায় তা।
এই রুটে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা জানিয়েছেন, দুর্ভোগ শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড পার হওয়ার পর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারঘাট, বাহুবল নবীগঞ্জ, মৌলভীবাজারের শেরপুর পেরিয়ে সিলেট পর্যন্ত সড়কে রয়েছে ছোট থেকে মাঝাড়ি আকারের গর্ত। বৃষ্টির পনি জমলে মনে হয় গর্ত অনেক বড়। তখনই গাড়ির গতি শূণ্যে নেমে আসে। অবশ্য সওজ প্রকৌশল বিভাগ দাবি করেছে, সারা দেশের সড়কগুলোরই মেরামত কাজ চলছে। ঈদের আগে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এই মেরামত কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
দুর্ভোগের আরেক নাম টঙ্গী-চান্দিনা
ঈদের সময়ে করা হয় ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের সংস্কারকাজ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। এই অংশে অসংখ্য খানাখন্দ, সড়কের দুই পাশে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে ডোবা। মাত্র এই ১২ কিলোমিটার বেহাল অংশই যাত্রীদের ভেঅগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়য়।
এই পথ যেতে আধা ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু লাগে ২-৩ ঘণ্টা, কখনো আরও বেশি। গত কিছুদিনের টানা বর্ষণে সড়কের কার্পেটিং উঠে বড় গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি চার লেনের মতো চওড়া থাকলেও অর্ধেক জুড়ে রয়েছে পানি। ফলে সরু হয়ে গিয়েছে রাস্তাটি। ঈদের আগে সড়ক পরিদর্শন করতে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী করতে দশ দিন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এরপর দেশের সড়ক-মহাসড়কে খোয়া-বালু এবং কোথাও কোথাও পিচ ঢালাইয়ের মেরামত চোখে পড়েছে। কিন্তু এগুলো টিকছে না। প্রতিবারই একই কাজ করা হয়। এটিও দুর্নীতি করার জন্য হয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সমস্যা বেশি হয়েছে। গত ঈদ-উল ফিতরের আগে-পরে প্রচুর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে তা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই কোথাও কোনো গলদ আছে। এই প্রশ্নের উত্তর দরকার আছে। নতুবা এটা শুধু দুর্ভোগের বিষয় নয়। আর বৃষ্টি তো অন্য দেশেও হয়। তারা কিভাবে সমস্যা সমাধান করে তাও দেখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে ব্যবহৃত বিটুমিন(পিচ বলে পরিচিত) এর শত্রু হচ্ছে পানি। কিন্তু অন্যান্য দেশেও বৃষ্টি হয়। তাহলে তাদের সড়ক কেন এত নষ্ট হয় না তা দেখতে হবে। আমাদের কাজের মান ভাল নয়। ঈদেও সময়ে তরিঘড়ি করে কাজ করা হয়। যারা কাজ করে তারাও জানেন, এটি সাময়িক সমাধান। তাই কোনো মতে গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কাজগুলো অদক্ষ ও দলীয় লোকজন পায়। কোন টেন্ডার দেয়া হয় না। ফলে সিংহভাগই যায় ঠিকাদার ও সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে। এজন্য কাজ ভালো হয় না।
টেকসই সড়ক নির্মাণের পরামর্শ
স্বাধীনতার পর আজও হয়নি আমাদের সড়ক নির্মাণের টেকসই কোনো পদ্ধতি। বিশ্ব ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত হওয়া সড়কের মান ভালো থাকলেও দেশিয় ঠিকাদারদেও কাজের মান এখনো ভালো হয়নি। কারণ হিসেবে দুর্নীতি ও দলীয় লোকদের দিয়ে কাজ করানোকে দায়ী করছেন সবাই।
দুর্ভোগ কমাতে ছুটি বাড়াতে হবে
ঢাকা থেকে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের দুরত্ব হচ্ছে সাড়ে তিতনশত কিলোমিটার। এর থেকে আরও শত কিলো দুরে পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনির হাট জেলা। এই পথে যেতেই লাগে দশ ঘণ্টা সময়। ঈদের সময় কোন গাড়িই নির্দিষ্ট সময় ছাড়ে না। যানজটে দশ ঘণ্টার পথ হয় ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টার। বলা পুরো একদিন লেগে যায়। আবার ঢাকায় ফিরতেও সময় লাগে একই পরিমাণ। তাই মাঝখানে একটি দিন সময় পায় সবাই। ছুটির দুই তৃতীয়াংশ চলে যায় পথেই। এসময় রাস্তার ট্রাফিক সামলাতেও পুলিশ সদস্যদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
তাই কষ্ট কমাতে ও দুর্ঘটনা রোধে
ঈদেও ছুটি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও সাধারণ মানুষ। বিষয়টি কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব আকারে গেলেও তা মন্ত্রিসভায় উঠেনি। ছুটি বেশি হলে বিভিন্ন সময়ে মানুষ গেলে গাড়ির ওপরও চাপ কমবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন