সড়কে মৃত্যুর মিছিল, একদিনেই ঝরল ২৪ প্রাণ

পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের পাঁচ জেলায় ২৪ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৮ জন, মাদারীপুরে ৯, যশোরে ৪, বগুড়ায় ২ জন ও পটুয়াখালীতে ১ জনের মৃত্যু হয়। বুধবার (২৭ মার্চ) গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৫টা পর্যন্ত সড়কে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-

মাদারীপুর: ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কলাবাড়ি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পরে ৭ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, সদর উপজেলার খাগদী ও রাজৈর উপজেলার রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৃথক দুটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টা ১০ মিনিটে টেকেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি লোকাল যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে আছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কলাবাড়ি এলাকায় বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জনের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, রাজৈর উপজেলার রাজৈর বাসস্ট্যান্ডে মোটরসাইকেলের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নাইম বেপারী নামের এক বিকাশ কর্মী নিহত হয়। এছাড়া খাগদীতে অপর একটি মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আর একজনের মৃত্যু হয়।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. শশাঙ্ক কুমার সাতজনের মৃত্যুর বিষয়টি দৈনিক জাগরণকে নিশ্চিত করেন। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যশোর: জেলায় পৃথক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ৪ জন নিহত হয়েছে। এঘটনায় আরো অনন্ত ১৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে যশোর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে ও যশোর-খুলনা মহাসড়কের রুপদিয়া চাউলিয়ায় এলাকায় এ দুর্ঘটনা দুটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের শঙ্করপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে মোটরসাইকেল আরোহী আলেক সরদারকে (৫৫) একটি যাত্রীবাহী বাস পেছন থেকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তিনি যশোর শহরের শঙ্করপুর এলাকার ইসহাক সরদারের ছেলে। তিনি সকালে বাড়ি থেকে শহরে আসার পথে এ দুর্ঘটনায় পড়ে পড়েন।

অপরদিকে, একই সময় যশোর-খুলনা মহাসড়কের চাউলিয়া এলাকায় ট্রাক ও থ্রি হুইলারের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, মণিরামপুর উপজেলার গাবুখালি গ্রামের সুবাস বৈরাগীর ছেলে সুব্রত বৈরাগী (২২), সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের সুলতান মোল্লার ছেলে শামিম মোল্লা (১৯) এবং মণিরামপুরের ভোজগাতি গ্রামের ঋষিকান্তের স্ত্রী শিউলি (২৬)। এ দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয়রা যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার ওয়াহেদুজ্জামান আজাদ জানান, হাসপাতালে আনার আগে দুজন এবং আনার পরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে হাত-পা ভাঙা ও মাথায় আঘাত প্রাপ্তের সংখ্যা বেশি। আহতদের মধ্যে অভয়নগর উপজেলার সাকিব হাসানের (৩৫) অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

যশোর কোতয়ালী থানার ইনসপেক্টর সমীর সরকার জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বাস ও ট্রাকটিকে জব্দ করে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে  চালকও সহকারী চালক পালিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের লোহাগাড়া এলাকার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হয়। যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ নিহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী বলে জানা গেছে। বুধবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

হাইওয়ে পুলিশের চুনতি ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহত আটজনের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন- কক্সবাজারের চকরিয়ার উত্তর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার ভান্ডু মিয়ার ছেলে মো. নুরুল হুদা (২৫), বাঁশখালীর শেখেরখীল এলাকার মো. সিদ্দিকের ছেলে মো. সায়েম (২২), চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সিকদারপাড়া এলাকার মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে আফজাল হোসেন সোহেল (৩০), কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর ছনখোলা নয়াপাড়া এলাকার মো. জিসানের স্ত্রী তসলিমা আক্তার (২০) ও তার মেয়ে সাদিয়া (২) এবং তসলিমা আক্তারের মা হাসিনা মমতাজ (৪৫)।

পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা রিলাক্স পরিবহনের একটি এসি বাসের সঙ্গে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আটজন নিহত হন। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। একই ঘটনায় বাসের ২০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।’

বগুড়া: বন্ধুর বিয়েতে বেড়াতে এসে বগুড়ায় গাছের সঙ্গে ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর আহসান হাবীব জেবু (২৩) নামের এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে জেলার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে এ দুঘটনা ঘটে। নিহত পুলিশ সদস্য সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী গ্রামের আব্দুল খালেক সরকারের ছেলে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানাগেছে, প্রায় ৫ বছর আগে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগ দেন আহসান হাবীব জেুব। তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের গাড়ী চালক হিসেবে কাজ করতেন। ২৬ মার্চ ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন বন্ধুর বিয়েতে যাবার জন্য। নিমগাছী এলাকা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে রাত দেড়টার দিকে আহসান হাবীব ও তার বন্ধু ইসমাইল মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ফকিরপাড়া নামকস্থানে পৌঁছেলে অসাবধানতাবশত গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে আহসান হাবীব আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ধুনট থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) ইসমাইল হোসেন মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

এদিকে, বগুড়ায় কোচ চাপায় চাঁন মিয়া (৩৫) নামের এক ভটভটি চালকের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের জেলার শেরপুর উপজেলার ছোনকা বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত চাঁন মিয়া লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার গন্ধমরিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে।

হাইওয়ে পুলিশের নন্দীগ্রাম কুন্দারহাট ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক কাজল কুমার নন্দী জানান, ছোনকা বাজার এলাকার একটি অটোমিল থেকে চালবোঝাই করে ভটভটিটি মহাসড়কের উক্ত স্থানে পারাপার হচ্ছিল। এসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বগুড়াগামী শ্যামলী পরিবহনের দ্রুতগতির একটি যাত্রীবাহী কোচ ওই ভটভটিকে চাপা দেয়। তাকে উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

পটুয়াখালী: জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রানীপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত লতিফ খান (৫০) মজিদবাড়িয়া কবুতরচর এলাকার গফুর খানের ছেলে। তিনি এলাকায় ডিস ক্যাবল ব্যবসা করতেন।