হজে গিয়ে মৃত্যু : মরদেহ দেশে আসবে, নাকি সেখানে দাফন
হজযাত্রী সৌদি আরবে মারা গেলে মরদেহ দেশে পাঠানো হবে, নাকি সেখানে দাফন করা হবে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। চলতি বছর হজ পালন করতে গিয়ে মোট ২১ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মক্কায় মারা গেছেন ১৬ জন ও মদিনায় পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও একজন নারী। হজ বুলেটিন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হজে আসার আগে প্রত্যেক হজযাত্রী হজে গমনের আবেদনপত্র পূরণ ও স্বাক্ষর করেন। সেই আবেদনপত্রে অঙ্গীকার করেছেন, সৌদি আরবে মৃত্যু হলে মরদেহ সেখানেই দাফন করা হবে। কোনো ওজর-আপত্তি থাকবে না। এমনকি পরিবার-পরিজনের কোনো আপত্তি গ্রাহ্য করা হবে না।
সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি হজযাত্রীর বাড়ি বা রাস্তায় দুর্ঘটনা অথবা হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ইন্তেকালের খবর নিশ্চিত হয়ে নিকটস্থ হাসপাতাল অথবা বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করা হয়। তারপর মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়। মৃত হাজির আত্মীয়স্বজন বা কাছের কেউ তা শনাক্ত করেন। তা সত্যায়িত করার জন্য মোয়াল্লেম অফিস থেকে ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয়। বাংলাদেশ হজ কার্যালয় থেকে সনদপত্র সংগ্রহ করা হয়।
মক্কায় হজযাত্রী মারা গেলে মসজিদুল হারামে জানাজা হয়। আর মদিনায় মারা গেলে মসজিদে নববীতে জানাজা হয়। জেদ্দায় মারা গেলে জেদ্দায় জানাজা হয়। জানাজা শেষে মক্কার শারায়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে অথবা জেদ্দায় কবরস্থানে দাফন করা হয়। মক্কা ও মদিনা দুই জায়গাতেই প্রায় প্রতি ওয়াক্তেই ফরজ নামাজের পর জানাজা হয়। হজযাত্রী এবং আশপাশের এলাকার স্থানীয় সৌদি নাগরিক মারা গেলে তাঁদের জানাজা এই দুই পবিত্র মসজিদে হয়ে থাকে। কোনো কোনো ওয়াক্তে একাধিক জানাজাও হয়ে থাকে। হজযাত্রীরা ফরজ নামাজের পর সঙ্গে সঙ্গে সুন্নত নামাজ শুরু না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন জানাজার জন্য।
মক্কার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা মাকসুদ সেলিম জানান, কোনো হজযাত্রী মারা গেলে লাশ গোসল করানো, কাফনের কাপড় পরানো, জানাজা পড়ানো, দাফন করাসহ যাবতীয় কাজ নির্দিষ্ট বিভাগ করে থাকে।
হজ করতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে
কোনো হজযাত্রী অসুস্থ হলে বাংলাদেশ মেডিকেল মিশনে চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ গ্রহণ করেন। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে বিভিন্ন হাসপাতালে, যেমন: বাদশাহ আবদুল আজিজ হাসপাতাল, বাদশাহ ফয়সাল হাসপাতাল, আল নূর বিশেষায়িত হাসপাতাল, আজইয়াদ হাসপাতালে, বাদশাহ আবদুল্লাহ মেডিকেল সিটি, মদিনার আনসার হাসপাতাল রেফার্ড করেন। এর বাইরে মক্কা-মদিনায় এলাকাভিত্তিক অসংখ্য ক্লিনিক রয়েছে। হাজিদের জন্য সব স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স সেবাও দেওয়া হয়।
এ ছাড়া হজের সময় মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে অনেক ক্লিনিক ও হাসপাতালে হাজিদের জন্য বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। মাকসুদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের দেশের মতো চাইলে যে-কেউ ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে পারেন না। ওষুধ কিনতে হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখাতে হয়। আর চিকিৎসকের কাছে গেলেও ইকামা বা সৌদি আরবে থাকার বৈধ অনুমতিপত্র দেখাতে হয়। হজযাত্রীদের মোয়াল্লেমের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখাতে হয়।’
জেদ্দা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার ৩১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে এসেছেন। প্রতিদিন হজযাত্রীদের ছবি, মৃত হাজির নাম, পরিচয় ও তথ্য হালনাগাদ করা হয় www.hajj.gov.bd—এ ঠিকানায়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন