হঠাৎ করেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী
ফাঁসি দিয়েও যেমন খুন ঠেকানো যায় না তেমনি ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্নফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানিয়ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এই পরিস্থিতিতে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তিনি বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস রোধে কোনো চাবি নেই।
বৃস্পতিবার সচিবালয়ে মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম উন্নতকরণ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘চাবি দিলেই প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে না। তবে আমরা প্রশ্নফাঁস বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা একটা অপরাধ।’
ব্যবস্থা নিলেও অপকর্ম ঠেকানো কঠিন বলেও মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ টেনেছেন খুনোখুনির। নাহিদ বলেন, ‘খুন একটা অপরাধ। খুনের সাজা ফাঁসি। ফাঁসি তো অনেক হচ্ছে। কিন্তু খুন তো থেমে থাকেনি। তাই প্রশ্নফাঁসও বন্ধে হচ্ছে না।’
গত কয়েক বছর ধরেই পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এক আলোচিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসির মতো পাবলির পরীক্ষা তো বটেই, ফাঁস হচ্ছে ছোটদের মাধ্যমিক সমাপনী এমনকি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নও।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষার আগে দেখা গেছে, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন উত্তরসহ দিয়ে দেয়া হচ্ছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, প্রশ্ন ফাঁসকারী আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টাও করছেন না। এই প্রশ্নফাঁসে ষড়যন্ত্র আছে বললেও সরকার এর সঙ্গে জড়িতদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না।
আবার প্রশ্নফাঁস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেও অভিভাবকরাই তাদের সন্তানদের জন্য প্রশ্ন যোগাড় করে আনছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এতে চরম সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, প্রশ্ন ফাঁস নতুন কোনো বিষয় না, কিন্তু এর প্রচারটা নতুন। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস কোনো কালেই বন্ধ হয়নি। সব সময়ই প্রশ্নফাঁস হয়েছে। আমার শিক্ষার বয়স ৬০ বছর। তখন থেকেই প্রশ্নফাঁস ছিল। কিন্তু ওই সময় তো আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। যে কারণে প্রচার কম হয়েছে। কিন্তু এখন প্রচার বেশি হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁস হতো। কিন্তু এখন আমাদেও কিছু অনৈতিক শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস করছে। এসব বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
বইয়ের বোঝা কমানোর পরামর্শ
মাধ্যমিকে পাঠ্যবইয়ের বোঝা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। আজকের সভায় শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের উপর থেকে চাপ কমাতে হবে। চাপ কমাতে পাঠ্যবই কমাতে হবে ‘
পরে বইয়ের চাপ কমাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, জেএসসি ও জেডিসিতে তিনটি বিষয় এবার পাবলিক পরীক্ষা হয়নি। আর আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় দুইটি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে না। এরমধ্যে একটি হচ্ছে শারীরিক শিক্ষা। অপরটি ক্যারিয়ার শিক্ষা।’
জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বার বার পরামর্শ দিয়েছি পাবলিক পরীক্ষা কমানোর জন্য। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আছে দুইটি বিষয় পাবলিক পরীক্ষা নিতে হবে। এখন অনেক বেশি। আশা করছি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদেও পরামর্শ গ্রহণ করবে।’
পাঠ্যবই হবে প্রাঞ্জল ও সুখপাঠ্য করার পরামর্শ
মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যবই উন্নত, প্রাঞ্জল ও সুখপাঠ্য করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ সভায় বলেন, ‘আমেরিকায় পাঠ্যবই অনেক সুন্দর, সুখপাঠ্য। উপন্যাসের মতো। শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে বই পড়ে। আমি চাই আমাদের বইগুলো সেরকম হোক।’
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক কায়কোবাদ, এম এম আকাশ প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন