হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত, ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবারো শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগের আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ফলে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা নেই।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এর চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে আদেশ দেন। সেইসঙ্গে এ নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে রুলও জারি করেন।
এদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকরা এজলাসে ওঠেন। বিভিন্ন মামলার ম্যানশন শুনানির পর দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে এ রিটের শুনানি শুরু হয়। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে হাইকোর্ট আদেশ দেন। নির্দেশনায় ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের জানানো হয় এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে। এরপর হাতে লিখে আবেদন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
এর আগে রোববার (৩১ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে হওয়া রিটের শুনানির জন্য সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। আদালতে ওইদিন রিটের বিষয়টি উত্থাপন করেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
এস এম ফরহাদ ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি।
গত ২৮ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে অপরাজেয় ৭১’, ‘অদম্য ২৪’ প্যানেলের বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা গত ২৬ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। তালিকায় এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে করা রিটে তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ করা হয়।
রিট আবেদনে ডাকসুর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা দেওয়াটা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়।
আসন্ন নির্বাচনে ফরহাদের প্রার্থিতা বাতিল করে তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়েও রুল চাওয়া হয়। রুল হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার অংশটুকুর কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে জমজমাট প্রচারণা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। আর স্বাধীনতার পর মাত্র সাতবার হয় ডাকসু নির্বাচন। যার মধ্যে সবশেষ ভোটগ্রহণ হয় ২০১৯ সালে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন