হাতির মুক্তি চেয়ে দিল্লির হাইকোর্টে পিটিশন!
পুরুষ শাবকটির নাম শঙ্কর। আর মেয়েটির নাম বোম্বাই। এটি দুটি হাতিকে ভারতের নবম রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মাকে রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। আফ্রিকান প্রজাতির হাতির ওই দুটি শাবক ১৯৯৮ সালে উড়োজাহাজে করে উড়িয়ে আনা হয় ভারতে। এরপর রাখা হয় দিল্লি চিড়িয়াখানায়।
চিড়ায়াখানার শুরুর দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল হাতি শাবক দুটির। এর মধ্যে ২০০৫ সালে হঠাৎ মারা যায় বোম্বাই। এরপর ১৭ বছর ধরে একাই আছে শঙ্কর। সম্প্রতি ২৬ বছর বয়সী হাতিকে মুক্তি দিয়ে নিজ দেশে পাঠানোর দাবি উঠেছে। দিল্লির হাইকোর্টে হয়েছে পিটিশনও।
বনাঞ্চলে হাতি প্রজাতি সম্মিলিতভাবে জীবন কাটায়। দলের হাতিদের পরস্পরের মধ্যে আছে গভীর সম্পর্ক। তবে বনাঞ্চলে এরা যেভাবে চলাফেরা করে চিড়িয়াখানায় তাদের সে রকম পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। শঙ্করকেও স্বাভাবিক পরিবেশ না দিয়ে বদ্ধ এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাই তাকে সঙ্গী জোগাড় করে দেওয়া অথবা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি উঠেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাসপিনাল ফাউন্ডেশন’ তাদের খরচে শঙ্করকে আফ্রিকায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। একই দাবিতে দিল্লির হাইকোর্টে পিটিশন করা ১৬ বছর বয়সী তরুণী নিকিতা ধাওয়ান চালিয়ে যাচ্ছে অনলাইন প্রচার। নিকিতার ‘ইয়থ ফর অ্যানিমেল’ নামের সংস্থার এই অনলাইন প্রচারে ইতিমধ্যে সমর্থন জানিয়েছেন প্রায় এক লাখের মতো মানুষ।
আদালতে করা পিটিশনে নিকিতা বলেছে, বছরের পর বছর ধরে শঙ্কর নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে। তাই হাতিটিকে চিড়িয়াখানা থেকে সরিয়ে বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা দরকার। না হলে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠানো উচিত। পিটিশনে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর সঙ্গে যথাযথভাবে দেখাশোনা করা হয় না বলেও অভিযোগ এনেছে নিকিতা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্ষ্মী এবং হিরা নামে দিল্লি চিড়িয়াখানায় আরও দুটি হাতি আছে। তবে তাদেরকে শঙ্করের কাছ থেকে আলাদা রাখা হয়। এ বিষয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, শঙ্করের একাকিত্ব দূর করতে আরেকটি হাতির খোঁজ করা হচ্ছে। সঙ্গী পাওয়া না গেলে চিঠিতে শঙ্করকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানায় হাতি রাখা নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি হাতিকে ছয় মাসের বেশি একাকী রাখাও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নিকিতা বলেছে, শঙ্করকে নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে আমরা মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চাই। ভারতীয় ঐতিহ্য ও আইন অনুযায়ী হাতি যেন অবাধে চলতে পারে তা নিশ্চিত করতে চাই।
বিবিসি জানায়, নিকিতার পিটিশনের পর আদালত শঙ্করকে চিড়িয়াখানা থেকে স্থানান্তরের পক্ষে রায় দিয়েছে। তবে তার আগে শঙ্করের শারীরিক অবস্থা স্থানান্তরযোগ্য কিনা, সেটা চিকিৎসকদের পরীক্ষা করে দেখতে বলেছেন।
সূত্র: বিবিসি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন