হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক জলাভূমির দেশি কৈ

হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক জলাভূমির দেশি কৈ। মাছের বিস্তীর্ণ আবাস বলে খ্যাত মৌলভীবাজার জেলার হাইল হাওরেও চলছে দেশি প্রজাতির মাছের চরম সংকট। ফলে বাজারেও দুর্লভ হয়ে পড়েছে দেশি প্রজাতির মাছ। মুক্ত জলাশয় থেকে আহরিত স্থানীয় জাতের দেশি মাছগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বিলুপ্তপ্রায় এ সকল মাছের মধ্যে অন্যতম দেশি কৈ।

প্রাকৃতিক তাপমাত্রার তারতম্যে ব্যাহত হচ্ছে এ সকল মাছের প্রজনন। অপরদিকে দিনকে দিন হাইল হাওর হারিয়ে ফেলছে তার আপন নাব্যতা। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসছে দেশি মাছের বংশবৃদ্ধি। ধীরে ধীরে পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় কমছে দেশি প্রজাতির মাছ, একইসাথে বাড়ছে বিভিন্ন ফিসারির মাছের ওপর নির্ভরশীলতা।

হাওরপাড়ের বাসিন্দা প্রকৃতিপ্রেমী মিন্নত মিয়া বলেন, দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে দেশি কৈ মাছ আগের মতো ব্যাপকভাবে আর চোখে পড়ছে না। মানুষ তার চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়েই নির্ভরশীল হচ্ছে ফার্মের বা হাইব্রিড কৈ’র ওপর। দেশি কৈ মাছের স্বল্পতার কারণে এর দামও বেশি যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

‘বিভিন্ন হাটবাজারে হাইব্রিড কৈ বিক্রি হচ্ছে বড় সাইজের ২৫০ কেজি দরে। আর মাঝারি সাইজের বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২শ’ টাকা কেজি দরে। যেখানে দেশি কৈ মাছের হালি পড়ে বড় সাইজের ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা। আর মাঝারি ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা হালি।’

শহরের নতুন বাজার এলাকার খুচরা মাছ বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, ‘দেশি মাছের খুব সংকট। আমরা দেশি কৈ মাছ কিনতে পাইরাম না। দাম দিয়া আনা লাগের। এর লাগি বেশি দামে বেচা লাগের। বেশি দামে কেউ নেয় না।’

মাছের আড়ৎদার মো. করিম জানান, আমরা ফার্মের কৈ বেচি। কম দাম হওয়ায় এর চাহিদা মোটামুটি ভালোই। মৌলভীবাজার জেলার বেশ কজন ফিসারি মালিক এর চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু আয়ের সাথে ব্যয়ের মিল না থাকায় এর চাষ সবাই বন্ধ করেছেন। জেলার প্রায় সব মাছের আড়তে হাইব্রিড কৈ বিক্রি হয়। তা আসে নরসিংদী ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে। এসব এলাকায় এর চাষ হয়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. শহিদুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, দেশি প্রজাতির কৈ মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। এর অন্যতম প্রধান কারণ চা বাগানগুলোতে যেসব কীটনাশক দেয় তার পানি ছড়া দিয়ে নেমে হাইল হাওরে প্রবাহিত হওয়ার ফলে কৈ মাছের ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এতে দেশি কৈ মাছ তার প্রজনন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

কৈ মাছকে ইংরেজিতে Gangetic koi বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anabas cobojius। মিঠা পানির এ মাছটি স্বাদে অতুলনীয়।