হাসপাতালে রিপ্রেজেন্টেটিভদের কারণে স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীরা অস্বস্থি ও বিব্রত

হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পথে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা (রিপ্রেজেন্টেটিভ) রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করেন। নিজেদের কোম্পানীর ঔষধ লেখা আছে কিনা তা দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কেউ বা তাদের মুঠোফোন দিয়ে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে রাখেন। এতে রোগীরা অস্বস্থি ও বিব্রতের মধ্যে পড়ে। এমন দৃশ্য প্রায় দেখা যায় নওগাঁ সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে। হাসপাতালে সেসব রোগীরা আসে তাদের মধ্যে অনেক গুরুত্বর রোগী থাকে। হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন সচেতনরা।

জেলার একমাত্র ভরসারস্থল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতাল। প্রতিদিন এই হাসপাতালে শত-শত রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। কিন্তু সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধির কারণে। হাসপাতাল চত্বরে টিকিট কাউন্টারের পাশে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পথে টিকিট কাউন্টারের পাশে ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসা নির্দেশিকা বই দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে করে একদিকে যেমন বিব্রত রোগীরা অন্যদিকে বেড়েই চলছে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্ব।

বক্তারপর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হওয়ার পর টিকিটি কাউন্টারের সামনে ৩/৪ জন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ঘিরে ধরেন। এরপর ব্যবস্থাপত্রটি নিয়ে কী কী ওষুধ লিখা আছে দেখা শুরু করে। অন্যদিকে একজন মোবাইল ফোনে বইটির ছবি তুলেন। প্রায় ২ মিনিট পর আবারও ফেরত দেয়া হয়।

শহরের কোমাইগাড়ীর বাসিন্দা ফরিদা পারভিন বলেন, এক বছরের বাচ্চার কয়েকদিন থেকে জ¦র সর্দি। শিশু ডাক্তারকে দেখানোর পর ফিরছিলাম ঠিক তখনই টিকিট কাউন্টারের পাশে এক লোক কাগজটি (ব্যবস্থাপত্র) দেখতে চাইল। না বুঝেই তাকে দিলাম। এরপর কাগজটির ছবি তুলে নিয়ে আবার দিয়ে দেয়। এতে বিব্রত মনে হলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আমরা সেলস বিভাগে কাজ করি। নানা সময় চিকিৎসকদের নানা ধরনের সুবিধা ও উপহার দিয়ে থাকি। আমাদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখা আছে কিনা তা দেখার জন্য হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকি। চিকিৎসকরাও বিষয়টি জানে।

ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নওগাঁর রিজিওন্যাল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রোগীর অনুমতি ছাড়া ব্যবস্থাপত্র প্রতিনিধিদের হাতে নিয়ে দেখতে নিষেধ করা আছে। রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাজের অংশ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান ভিজিট করা। যদি কেউ ব্যবস্থাপত্র দেখাতে না চান তবে জোর করা যাবেনা।

ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড নওগাঁর সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার শাহিন কাদের বলেন, হাসপাতাল কৃর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতি বা নিষেধ কোনটাই করেনি। যার কারণে আমাদের রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীদের অনুমতি নিয়েই ব্যবস্থাপত্র দেখে থাকেন। আমরা ডাক্তারদের স্বস্ব কোম্পানীর ওষুধ লিখার জন্য বলিনা। রিপ্রেজেন্টেটিভরা অনেক সময় ডাক্তারদের সাথে সাক্ষাত করতে যায় পরিচিত হয়। এর বাহিরে কিছু নয়। আর যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিষেধ করে তবে আমাদের কোন রিপ্রেজেন্টেটিভরা হাসপাতালে যাবেনা।

নওগাঁ সদর হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডাঃ ইবনে ইমাম বলেন, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা এখন পর্যন্ত রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিরুদ্ধে জড়ালোভাবে কোন অভিযোগ করেনি। তাই তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। হাসপাতাল চত্বরে তাদের আসার ক্ষেত্রে অনুমতি বা নিষেধ করা হয়নি। যদি কোন চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানীর স্বার্থ রক্ষা করে ওষুধ লিখে তবে রোগীর স্বাস্থ্য বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হতে পারে। রিপ্রেজেন্টেটিভদের মন জোগাতে ওষুধ লেখার প্রবনতা অনেক চিকিৎসকের রয়েছে যা অস্বীকার করা যাবেনা।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিই রিপ্রেজেন্টেটিভদের নিষেধ করে থাকি যে হাসপাতাল চত্বরে তাদের কারনে কোন রোগী বা অবিভাবকরা যেন বিরক্ত না হয়। তবে এ সমস্যার সুরহা করতে কিছুটা সময় লাগবে।