হুমায়ূন আহমেদ নেই, আজ পাঁচ বছর হল
বিধান মুখার্জী : জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তিনি কথাসাহিত্যের জাদুকর। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের শ্রেষ্ঠ লেখকদের মধ্যে অগ্রগণ্য এই লেখক বাংলা কথাসাহিত্যে এনেছেন নতুন মাত্রা। আকাশচুম্বী জনপ্রিয় এই লেখকের ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই লাখো পাঠক অশ্রু সিক্ত হৃদয়ে শেষ বারের মত বিদায় জানিয়েছেন তাকে। সকলের প্রিয় ‘হুমায়ূন স্যার’ নেই আজ পাঁচ বছর হল।
পাঠক নন্দিত এই লেখক ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের নেত্রকোণা মহকুমার কুতুবদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।
আধুনিক সংলাপনির্ভর কথাশৈলীর জাদুতে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলার সাহিত্য ভাণ্ডার। আধুনিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ এই লেখক বাংলা ভাষায় সৃষ্টি করেছেন কল্পবিজ্ঞান পিয়াসী পাঠক। ছোটগল্পের বাচন ভঙ্গিমায় মুগ্ধ করেছেন সকল বয়সের পাঠক পাঠিকাকে। একাধারে তিনি সফল ঔপন্যাসিক , ছোট গল্পকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও গীতিকার।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। তার লেখায় তিনি তুলে এনেছেন ছোট ছোট গল্পে সমৃদ্ধ মুগ্ধতা আর শেষ হয়েও শেষ না হবার অদ্ভুত আবহ। তিনি তার লেখায় বারবার প্রকৃতির রহস্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন হিমু হিসেবে আর বারবার সেই রহস্যের ব্যাখ্যা পেতে বিশ্লেষণ করেছেন মিসির আলী হয়ে। ভ্রমনপ্রিয় মানুষকে তার লেখার মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন রাবণের দেশে। হ্যামিলনের বাঁশির সুর হয়ে ওঠা তার লেখা মন্ত্রমুগ্ধ করেছে দেশে বিদেশে নানান বয়সের হিমু’দের।
হুমায়ূন আহমেদের এক অপূর্ব সৃষ্টি শুভ্র। শুভ্রতায় শুভ্র অতুলনীয়। হিমু কিংবা মিসির আলীর তুলনায় জনপ্রিয়তা কম হলেও তার রচিত শুভ্র চরিত্র জয় করেছে মানুষের চারিত্রিক শুভ্রতার তুলনাকে। জীবদ্দশায় নন্দিত এই লেখক বাংলা সাহিত্যে তিনশতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত তার মধ্যাহ্ন্ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে রচিত জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প তার শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের অংশ বিশেষ।
তার অভাব বাংলার চলচ্চিত্র অঙ্গনেও অপূরণীয় এক ক্ষতি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
টিভি নাট্যকার হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় নির্মাণ করেন প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’। এ নাটকটি তাকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। এছাড়াও তার হাসির নাটক ‘বহুব্রীহি’ এবং সৃষ্টির অনবদ্য ইতিহাস ‘অয়োময়’ ছিলো বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। এছাড়াও তিনি নির্মাণ করেন নাগরিক ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর চরিত্র বাকের ভাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
শুধু তাই নয়। নন্দিত এই লেখককে নিয়ে দেশের বাইরেও রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। তার প্রমাণ জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে পনের মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।
পাঠক নন্দিত এই লেখক বৃষ্টিতে ভিজতে শিখিয়েছেন তরুণদের, শিখিয়েছেন চাঁদের জ্যোৎস্না মেখে নক্ষত্রের রাতের অপেক্ষা করতে। আর তাই তিনি মিশে গেছেন অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে। তিনি বেঁচে আছেন তারুণ্যের বইয়ের সেলফে যত্নে রাখা তার অমর সৃষ্টিতে। তিনি বেঁচে আছেন তরুণ তরুণীর ভালবাসায় আর অদ্ভুত সব গল্পে।
লেখক : শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন