হ্যাটট্রিক জয়ে আওয়ামী লীগের বড় বাধা কী?

টানা ১০ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। সরকার ও দল একসঙ্গে চালাতে গিয়ে বেশ লেজেগুবরে অবস্থা দলটির তৃণমূলে। যিনি এমপি-মন্ত্রী, তিনিই জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক। এভাবে সরকার ও দলের প্রভেদ না করতে পারায় সারাদেশে ঘরের ভেতরে ঘর তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের। নেতাকর্মীদের মাঝে না পাওয়ার ক্ষোভ যেমন জমেছে, তেমনি দলে ফুটে ওঠেছে বিশৃঙ্খলা।
আসছে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জয় লাভের মধ্য দিয়ে হ্যাটট্রিক করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এ জন্য উন্নয়ন প্রচারণাসহ নানা প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যে মাঠেও নেমেছে। ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়ে প্রার্থীদেরও নামিয়ে দেয়া হয়েছে। নানা জায়গায় গিয়ে এমপিরা যেমন লক্ষ মানুষের রিসিপশন পাচ্ছেন, তেমনি মনোনয়ন বঞ্চিতপক্ষের লোকজনের ওপর হামলারও ঘটনা ঘটছে। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের ভয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীরাই ঘরছাড়া। বেশিরভাগ জায়গায় মনোনয়নপ্রাপ্ত আর বঞ্চিতদের সমন্বয় নেই। একে অপরকে ফেল করানোর জন্য কাজ করবে বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া নানা জায়গায় জোট ছাড় দেয়া আসনে দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দলের ভেতরে এ ‘পা টেনে ধরা’ নীতি নির্বাচন পর্যন্ত থাকলে ফায়দা লুটবে বিরোধীপক্ষ।
মনোনয়নের চিঠি দেয়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল; ‘কোনো মিষ্টি বিতরণ নয়। যারা আজ নমিনেশন পাননি আওয়ামী লীগের তারাই ত্যাগী নেতাকর্মী, তাদেরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে একতাবদ্ধভাবে কাজ করুন। মনে রাখবেন আজকের আওয়ামী লীগ অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদের রক্তের ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে।’
নেত্রীর এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নের চিঠি বিতরণের দিনই বাগেরহাট-৪, চাদপুর-১ ও ঢাকা-১৯ এ মনোনয়নপ্রাপ্তদের লোকজনের হাতে অন্য প্রার্থীর লোকজনের ওপর হামলার খবার পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা) পুটিখালী ইউপি’র মঙ্গলেরহাট বাজারে ৪টি দোকান, একটি স্ব মিল ও একটি বিস্কুটের কারখানা আওয়ামী লীগের নমিনেশন প্রাপ্ত মোঃ মোজ্জাম্মেল হোসেন এর সর্মথক নেতাকর্মিরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং এসব প্রতিষ্ঠান না খোলার জন্য হুমকি দেয়। একই উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউপির মাঝিবাড়ী এলাকায় মজিদ চাপরাশির দোকান আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রাপ্তপ্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মিরা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও তারা সলিমাবাদ কলেজের অধ্যক্ষকে দরজা আটকিয়ে মারধর করেছে।
এদিকে ঢাকা-১৯ সাভার এলাকায় মনোনয়নপ্রাপ্ত সাংসদ এনামুর রহমানের লোকজন তার সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশী তৌহিদ মুরাদ জংয়ের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তারা সাভার কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি আহমেদ রুবেলের ব্যাংক কলোনির ভাড়ি ভাংচুর করেন। হকার্স লীগের সভাপতি আতাউর রহমানের সাভার বাজারের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। হকার্স নেতা কাদের মোল্লার দোকান ভাংচুর, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আরিফ উদ্দিন খানের ব্যাংক কলোনির বাসায়ও ভাংচুর চালানো হয়।
চাঁদপুর-১ (কচুয়া উপজেলা) এ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যৌথভাবে বর্তমান এমপি মহীউদ্দিন খান আলমগীর ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। মনোনয়ন পেয়ে উপজেলার করইশ গ্রামে গোলাম হোসেনের সমর্থকরা নৌকার প্রচারণা চালাতে গেলে হামলায় মখা আলমগীরের লোকজন হামলা চালায়। এসময় গোলাম হোসেনের সমর্থক ইমাম হোসেন আহত হন।
যশোর সদরে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। প্রভাবশালী এ নেতার অভিমান ও সরে দাঁড়ানোয় যশোরে দলের চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এভাবে সারাদেশের মনোনয়প্রাপ্ত ও বঞ্চিতদের মধ্যকার পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিছু জায়গায় দলের প্রার্থীকে হারিয়ে নিজের রাজনীতি বাঁচাতে কাজ করবেন অনেকে। এ সমস্যা সমাধান না করা গেলে তারাই একে-অপরের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সমাধানে নেতাদের বুঝাবেন বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ৯ তারিখের আগেই আমাদের প্রার্থীতা চূড়ান্ত হবে। এরপর যারা বঞ্চিত হবে তাদের আমরা বোঝাব। এরপরেও কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দলে গণতন্ত্র থাকলে মনোনয়নের বা নেতৃত্বের এ প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। আদর্শ চর্চা থাকলে এগুলো তেমন বাধা নয়। আমরা বেশিরভাগ এলাকায় দ্বন্দ্ব নিরসন করেছি, বাকিগুলোও শিগগিরই সমাধান হবে।’
তবে ইতিমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বঞ্চিতরা একই মঞ্চে দাড়িয়ে সমন্বয় করেছেন। কেউ বা দূর থেকে সার্পোট দিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত সাদেক খানের সমর্থনে ভোট চেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও দলের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তাছাড়া মাদারীপুরে মনোনয়ন বঞ্চিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, দেশ বাঁচাতে শেখ হাসিনার সরকার গঠনের কাছে আমার মনোনয়ন পাওয়া তুচ্ছ বিষয়। প্রতিবেদন পরিবর্তন ডটকমের সৌজন্যে প্রকাশিত।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন