হয় ধর্ষণ‚ নয় প্রহার! এটাই ছিল তার নিত্য নিশিলিপি!

একজন ভারতীয় ডাকাত এবং পরে একজন রাজনীতিবিদ। দস্যুরানি নামেই তিনি বেশি পরিচিত। তার নামে থাকলেও জীবনে ছিল না কোনও ফুলের গন্ধ। তিনি ফুলন দেবী। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৩ সালের ১০ আগস্ট। বেঁচে থাকলে আজ বয়স হতো ৫৪ বছর।
এক নজরে দস্যুরানির জীবনের নানা দিক :
> ভারতের উত্তরপ্রদেশের জালাউন জেলায় গোহরা কা পুরওয়া গ্রামে জন্ম ১০ অগাস্ট‚ ১৯৬৩। এক গরিব মাল্লা পরিবারে। তাঁর পারিবারিক পেশা ছিল নৌকা চালানো। প্রত্যন্ত এই গ্রামে মেয়েদের শৈশবে বোঝা‚ যৌবনে পণ্য— এর বাইরে কিছু ভাবা হতো না।
> কন্যাপণ গরুর বিনিময়ে বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১১ বছর বয়সে।
স্বামীর বয়স ৩০ বছর। হয় ধর্ষণ‚ নয়তো বেদম প্রহার। এই ছিল বালিকা ফুলনের নিত্য নিশিলিপি।
> শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পালালেন ফুলন। হয়ে গেলেন দস্যু। দলে তিনি ছিলেন একমাত্র মেয়ে। দলেই প্রেমে পড়লেন। একদিন গোষ্ঠীসংঘর্ষে নিহত হলেন তাঁর প্রেমিক।
> অন্তর্দ্বন্দ্বে সেই দল ভেঙে গেল। ধরা পড়লেন ফুলন। অভিযোগ‚ বেহমাই গ্রামে উচ্চবর্ণের রাজপুত ঠাকুররা বন্দিনী করল তাঁকে। রোজ গণধর্ষিতা হতেন। অত্যাচার চলত যতক্ষণ না অবধি জ্ঞান হারাতেন।
> একদিন ছিবড়ে করে ফুলনকে ফেলে দিল রাজপুত ঠাকুররা। পৈশাচিকতার প্রতিশোধ নিতে ফুলন নিজেও নিলেন অন্ধকার পথ। চুরি ডাকাতি দিয়ে শুরু করে হয়ে গেলেন দস্যুরানি। দ্য ব্যান্ডিট কুইন।
> ১৯৮১ সালে দলবল নিয়ে ফুলন চড়াও হলেন সেই গ্রামে যেখানে রাজপুতদের হাতে গণধর্ষিতা হয়েছিলেন তিনি। চিহ্নিত করলেন দু‘ জনকে যারা ছিল ধর্ষকদের মধ্যে। বললেন‚ বাকিদের কাছে নিয়ে যেতে।
> তারা নিয়ে যায়নি। ক্ষিপ্ত ফুলন এরপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেন ২২ জন ঠাকুর রাজপুতকে। অভিযোগ‚ নিহতদের মধ্যে একজনও ফুলনের ধর্ষক ছিলেন না।
> হত্যাকারী হয়েও নিজের নির্যাতিত অতীতের সুবাদে ফুলন দেবত্বে উন্নীত হলেন। নামের পাশে বসল দেবী। আপামর ভারতবাসীর কাছে ফুলন দেবী।
> ভারত সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন দস্যুরানি ফুলন। তবে শর্ত ছিল‚ তাঁর বাবার জমি ফেরাতে হবে। সরকারি চাকরি দিতে হবে পরিবারের সদস্যকে। তাঁর দলের সদস্যদের প্রাণদণ্ড দেওয়া যাবে না। মেনে নেওয়া হয় সেসব শর্ত।
> ১৯৮৩ সালে মোট ৪৮টি মামলা ছিল ফুলনের নামে। ১৯৯৪ সালে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি।
> ১৯৯৫ সালে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন দস্যুরানি থেকে সাংসদ হওয়া ফুলন দেবী।
> ১৯৯৬ সালে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দুবার জয়ী হয়ে হন সাংসদ। উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর থেকে।
> ফুলন অতীত থেকে বেরিয়ে এলেও অতীত তাঁকে ছাড়েনি। ২০০১ সালের ২৫ জুলাই দিল্লিতে নিজের বাসভবনের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন সাংসদ ফুলন। সামনে থেকে তাঁকে গুলি করে পালায় মুখোশ পরা আততায়ীরা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ৩৭ বছর বয়সী ফুলনকে।
> পরে মূল আততায়ী শের সিং রানা ওরফে পঙ্কজ সিং পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। স্বীকারোক্তি ছিল‚ বেহমাইকাণ্ডের বদলা নিতেই ফুলনকে খুন করেছিল সে।
> ফুলনের মা ও বোন আজও আছেন গোহরা কা পুরওয়া গ্রামে। এখনও তাঁদের নিরন্তর যুদ্ধ করতে হয় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। একদা দস্যুরানি‚ অতীতের সাংসদের ঘরে দুবেলা উনুন জ্বলাই দুষ্কর।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















