১০০ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা

দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে ‘নির্বাচনের আগে সংস্কারকে’ অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনি প্রস্তুতিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের ২১ জেলায় ১০০টি আসনে স্থানীয়ভাবে ‘সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীর’ নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে গাজীপুরে চারটি, মাদারীপুরে একটি, মেহেরপুরে দুইটি, ঝালকাঠিতে দুইটি, সিরাজগঞ্জে পাঁচটি, নওগাঁয় পাঁচটি, রাজশাহীতে পাঁচটি, খুলনায় ছয়টি, সাতক্ষীরার চারটি টাঙ্গাইলে আটটি, নেত্রকোনার পাঁচটি, ফরিদপুরের চারটি, কিশোরগঞ্জে পাঁচটি, ময়মনসিংহের ১১টির মধ্যে ১০টি, মৌলভীবাজারে চারটি, দিনাজপুরে ছয়টি, শেরপুরে তিনটি, কিশোরগঞ্জে ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি, পঞ্চগড়ে দুইটি, পটুয়াখালীতে চারটি, সুনামগঞ্জে পাঁচটি ও পিরোজপুরে তিনটি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত এখনো অফিশিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এটা প্রাথমিক সিলেকশন। ইলেকশন এখনো অনেক দূর। ইলেকশন কাছে এলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। তখন যাদের নমিনেশন দেবে, তারাই প্রার্থী হবেন।’

রোববার বিকালে সিলেট নগরের দরগাগেট এলাকার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই, সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’

জানা গেছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চেষ্টায় আগেভাগেই ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায় দলটি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাকি ২০০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এখন থেকে ভোটের প্রচার শুরু করতে প্রার্থীদের বলা হয়েছে দলীয়ভাবে। অবশ্য ৫ আগস্টের পর দেশ জুড়ে কর্মী সম্মেলন, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশব্যাপী দলীয় ইউনিটগুলোকে সক্রিয় করতে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। এই সফরগুলোতে তিনি কর্মিসভা ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। এদিকে বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিতে বৃহত্তর জোট করার চেষ্টাও চালাচ্ছে জামায়াত। জামায়াত নেতারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী থাকবে, কিংবা জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের ৩০০ প্রার্থী থাকবে। গত ২১ জানুয়ারি বরিশালের চরমোনাইয়ে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। দীর্ঘদিন ধরে আদর্শিক বিরোধ থাকলেও দুই নেতা আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের কথা বলেন। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের এ সাক্ষাৎ রাজনীতিতে আলোচনা তৈরি করে।

সম্প্রতি মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে যান ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে দুই দলের নেতারা আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের বিষয়ে একমত হন। এই বৈঠকের পর মামুনুল হকের সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল।

খেলাফত মজলিসের একজন নেতা জানান, জামায়াতের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছিলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইসলামি দলগুলোর জোটের প্রচেষ্টা চলছে, তা হবে ইনশাআল্লাহ।

জামায়াতের ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, শুধু ইসলামি দল নয়, সবার সঙ্গেই কথা হচ্ছে। আবার সবাই সবার কথা বলছে। নির্বাচনের সময় যে মেরুকরণ হবে, জোট তার ওপর নির্ভর করবে। কে কার সঙ্গে থাকবে, তাও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।