১০ বছরের রোহিঙ্গা শিশুকেও ধর্ষণ করছে মিয়ানমার সেনা

নৃশংসতার হাত থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গা অসংখ্য শিশু, কিশোর-কিশোরী। তবে এর মধ্যে ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হচ্ছে মেয়ে শিশুরা। তাদেরকেও ধষর্ণ করা হচ্ছে। ১০ বছরের নিচে বয়স এমন মেয়ে শিশুর ওপরও নৃশংসতা চালিয়েছে মিয়ানমারের নরপিশাচরা।

কখনও একজন ধর্ষণ করলেও অধিকাংশ সময়ে দল বেঁধে গণধর্ষণ করেছে মিয়ানমার সেনারা। সঙ্গে নিয়েছে স্থানীয় বৌদ্ধদের। দাতব্য সংস্থাগুলোর রিপোর্টে এমন সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ রকমভাবে নির্যাতনের শিকার অনেক মেয়েকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে।

এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান। মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়েরস (এমএসএফ) বলেছে, এরই মধ্যে তাদের চিকিৎসকরা অর্ধ ডজন রোহিঙ্গা বালিকাকে চিকিৎসা ও মানসিক কাউন্সিলিং দিয়েছেন কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে। সেখানকার স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য বসানো অস্থায়ী ক্লিনিকে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক ইউনিটে এ সেবা দেয়া হচ্ছে।

যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য এ ক্লিনিকটি সেখানে গড়ে উঠেছে। এমএসএফের এক মুখপাত্র বলেছেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা নারীদের মধ্যে যারা এই ক্লিনিকে ধর্ষণের চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ ধর্ষিতার বয়স ১৮ বছরের নিচে।

তার মধ্যে একটি বালিকা আছে, যার বয়স মাত্র ৯ বছর। বাকি অনেকের বয়স ১০ বছরের নিচে। এমএসএফ বলছে, এরা হচ্ছে ধর্ষিত নারীদের সামান্য অংশ।

বাকিরা ধর্ষিত হলেও সামাজিক মর্যাদা, লজ্জা, নিজেদের ওপর দোষ চাপার ভয়ে চেপে যান বা গিয়েছেন। এমন নারীর সংখ্যা বহু। এমএসএফ-এর আয়েরলিন পফেইল বলেন, ধর্ষিত এমন অসংখ্য নারী এ কারণে মুখ খোলেন না। গত সপ্তাহে মাত্র ৯ বছর বয়সী একটি বালিকা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ছিল। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

এ জন্য তাকে এই ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এমন ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের দায়ী করছেন ধর্ষিতা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরই প্রেক্ষিতে এ ঘটনাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। তবে বিপুল সংখ্যক শিশু ও কিশোরীদেরকে যৌন নির্যাতনের এটা প্রথম অকাট্য প্রমাণ।

আরেকজন মেডিকেল স্পেশালিস্ট কাজ করছেন ওই আশ্রয় শিবিরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোনো একটি গ্রামের সব নারী ও যুবতীকে একত্রিত করে। তাদের মাঝ থেকে সবচেয়ে সুন্দরীদের তারা তুলে নিয়ে যায়।

এরপর কোনো একক সেনা সদস্য বা গ্রুপ মিলে ওই যুবতী বা নারীকে ধর্ষণ করে। তিনি বলেছেন, এভাবে যারা ধর্ষিত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর। তিনি সম্প্রতি একটি শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তার বয়স ১০ বছরের নিচে।

প্রচণ্ড রক্তপাত হচ্ছিল ওই শিশুটির। তাকে তিনজন সেনা সদস্য ধর্ষণ করেছে। পালিয়ে বাংলাদেশে আসা অসংখ্য নারী এমন গণধর্ষণের কথা বলেছেন। তাদের দাবি যে সত্য এসব ঘটনা তার প্রমাণ দেয়। ধর্ষিতাদের সঙ্গে এ নিয়ে সাক্ষাতকার নেয়া যায় নি।

কারণ, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন তাতে ধর্ষিতার মানসিক চাপ আরো বাড়বে। তবে বুথিডাং থেকে পালিয়ে আসা ২৭ বছর বয়সী এক যুবতীর সাক্ষাতকার নিতে পেরেছেন গার্ডিয়ানের সাংবাদিক।

ওই যুবতী বলেছেন, তার স্বামী ও পিতাকে সেনাবাহিনী ঘেরাও করে হত্যা করেছে। এ ঘটনা ঘটেছে ২৫ শে আগস্টের অল্প পরেই। ওই যুবতীর ১৪ বছর বয়সী বোনকে এ সময়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে এসে পুরুষ সদস্যদের একত্রিত করে একদিকে নিয়ে যায়। নারীদের নিয়ে যায় একটি জঙ্গলে।

তাদের ভিতর থেকে কিছু যুবতী ও নারীকে বেছে নেয় তারা। যখন আমার ছোট বোনকে তারা নিয়ে যায় আমি চিৎকার করে কেঁদেছি। কিন্তু তাদেরকে থামাতে পারি নি।

সেনারা অসংখ্য নারী, যুবতীকে নির্যাতন করেছে। ধর্ষণ করেছে। তারা আমার বোনকে ধর্ষণ করার পর আমি তার খোঁজে গেলাম। সেখানে দেখতে পেলাম মাটিতে পড়ে আছে অনেক নারীর দেহ। যখন সেখানে আমার বোনকে খুঁজে পেলাম আমি নিশ্চিত ছিলাম না সে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।

কিছুক্ষণ পরে টের পাই সে দম টানছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তার। তাকে কোলে তুলে আমি একটি ছোট নদীতে নিয়ে যাই। সেখানে তাকে ধুয়ে, গোসল করিয়ে আনি। এরপর তাকে কাঁধে তুলে নিই। হাঁটতে থাকি। রাখাইনে একটি ক্লিনিক পেয়ে যাই। সেখান থেকে কিছু ওষুধ কিনি তার জন্য।পরে আমার বোন বলেছে, তাকে ধর্ষণ করেছে দু’জন সেনা সদস্য ও এক বৌদ্ধ।

তবে বাংলাদেশের এই আশ্রয় শিবিরে যে স্পেশালিস্ট ক্লিনিক আছে তা শুনি নি। তাই আমার বোনকে কোনো চিকিৎসা করাতে পারি নি। ওদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত সপ্তাহে বলেছে, জাতি নিধনের ভয়াবহ হাতিয়ার হিসেবে ধর্ষণকে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।