১৪ লাখ ৫০ হাজার নতুন অভিবাসী নেবে কানাডা
আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ১৪ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসী নিতে চায় কানাডা। সারা দেশে প্রায় ১০ লাখ পদ খালি আছে।
এসব পদ পূরণের জন্য কানাডা বিদেশিদের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। তারা শ্রমিক সংকট কাটিয়ে উঠতে চায়। এর মধ্যদিয়ে আগামী তিন বছরে তারা রেকর্ড ভঙ্গ করে অভিবাসী নিতে চায়।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৪ লাখ ৫০ হাজার অভিবাসীকে আকৃষ্ট করতে নতুন পলিসি নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার এ ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী সিন ফ্রাসার। গত সপ্তাহে দেশটির একটি জনশুমারি বিষয়ক এজেন্সি ঘোষণা করেছে যে, কানাডায় প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে কমপক্ষে একজন অভিবাসী।এতে জনসংখ্যাতত্ত্ব পাল্টে যাচ্ছে। তার ওপর নতুন ঘোষণা আরও বড় প্রভাব ফেলবে।
সুইডেন এবং ইতালির মতো পশ্চিমা দেশগুলো যে নীতি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, কানাডা সরকার এখন সেদিকেই ঝুঁকছে। ইতালিতে নবনির্বাচিত দলগুলো অভিবাসীদের কমিয়ে আনতে চাইছে। সেখানে অপরাধ এবং বিশৃঙ্খলার জন্য তারা দায়ী করছে অভিবাসীদের। মঙ্গলবার টরন্টোর কাছে এক কনফারেন্সে মন্ত্রী ফ্রাসার বলেছেন, কানাডায় আরও মানুষ প্রয়োজন। কানাডার মানুষের এটা বোঝা উচিত যে, আমাদের জনসংখ্যা বাড়াতে হবে, যদি আমরা শ্রমখাতে প্রয়োজন মেটাতে চাই, যদি আমরা পরিবারগুলোকে নতুন করে একীভূত করতে চাই। মন্ত্রী আরও বলেন, কিছু উদ্বেগজনক প্রবণতা হলো ক্রমবর্ধমান প্রবীণের সংখ্যা। দ্রুত বিপুল পরিমাণ মানুষ অবসরে যাবেন। এপ্রিলে প্রকাশিত শুমারি বলছে, কানাডায় অবসরে যাচ্ছেন যেসব মানুষ, তাদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেশি। যদি এই জনসংখ্যাতত্ত্বের ধারা সংশোধন না করি, তাহলে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আমাদের যে শ্রম সংকট হবে তা পূরণ করতে পারবো না।
কানাডা দীর্ঘ সময় নিয়ে তার ক্রমবর্ধমান প্রবীণ এবং কম জন্মহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিবাসী নেয়ার কৌশল নিয়েছে। এতে জনগণের সমর্থন আছে। গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক সংকট আছে যেসব খাতে যেমন স্বাস্থ্যসেবা, কলকারখানা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে এসব ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকই পছন্দ করে কানাডা। এনভায়রনিকস ইনস্টিটিউট ফর সার্ভে রিসার্স নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জরিপ করেছে। তাতে দেখা গেছে, শতকরা ৫৮ ভাগ মানুষ বলেছেন তারা অধিক অভিবাসী সমর্থন করেন। কিন্তু কানাডা কী এত বেশি অভিবাসী নিতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে অসম্মতি জানিয়েছেন শতকরা ৬৯ ভাগ মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মনে করেন, যারা নতুন করে কানাডায় যাবেন, তারা কানাডার মূল্যবোধ ধারণ করেন না।
ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়ার লেকচারার ও আইনজীবী সালিমা সামনানি বলেন, জাতীয় মূল্যবোধ এবং অভিবাসীদের একই রকম অবস্থানের বিষয় নতুন করে বর্ণবাদের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। সামনানির পরিবার ভারতীয়। তারা কেনিয়া থেকে কানাডায় অভিবাসী হয়েছেন, যখন তার বয়স মাত্র ১২ বছর। বলেছেন, তিনি এই বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন। নতুন জীবনে তাকে সমাজে একপেশে করে রাখা হতো। স্কুলে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হতো। স্টোরে সার্ভিস নিতে গেলেও তাই। গণপরিবহনও তাই।
তিনি বলেন, আমি বুঝতাম না কানাডায় নতুন অভিবাসীদের জীবন মানিয়ে নেয়া কতোটা কঠিন। বিশেষ করে তিনি যদি একজন অ-শ্বেতাঙ্গ হন।
কানাডায় সবচেয়ে বেশি যেসব নতুন অভিবাসী যান, তারা হয়তো এশিয়ার না হয় আফ্রিকার। শুমারি বিষয়ক এজেন্সি বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে কানাডার প্রতি চার জনের একজন হবেন এসব মহাদেশের। ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৬৫ হাজার স্থায়ী বাসিন্দা নিতে চায় সরকার। ২০২৪ সালে ৪ লাখ ৮৫ হাজার, ২০২৫ সালে ৫ লাখ। ইমিগ্রেশন লেভেলস প্ল্যানে একথা বলা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে যে পরিমাণ নতুন অভিবাসী নেয়ার কথা বলা হয়েছে তা শতকরা ২৩ ভাগ বেশি।
গত সপ্তাহে জাতীয় শুমারি বিষয়ক এজেন্সি নতুন ডাটা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, কানাডার জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা ২৩ ভাগই অভিবাসী। ১৮৬৭ সালের কনফেডারেশনের পর এই হার সর্বোচ্চ। ওই সময়ে চারটি প্রদেশ প্রথমবার একত্রিত হয়ে গঠন করে কানাডা। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা পূর্বাভাস করেছে যে, দুই দশকের মধ্যে কানাডার জনসংখ্যার শতকরা ২৯ থেকে ৩৪ ভাগ হবেন অভিবাসী। ১৯৯০-এর দশক থেকে কানাডা অধিক সংখ্যক অভিবাসীকে ঠাঁই দিয়েছে। গড়ে প্রতি বছর তারা প্রায় দুই লাখ ৩৫ হাজার নতুন অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন