কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের ১০০ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে ১ কোটিতে!

১ বছর নয়, শিগগিরই খুলবে মিরপুর-১০ মেট্রোস্টেশন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন সংস্কার করে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে কাজীপাড়া স্টেশন, চালু হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে। তবে মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন চালু করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।

আগস্টের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপরই স্টেশন দুটির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলায় মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে টিকেট কাটার ভেন্ডিং মেশিন থেকে শুরু করে ব্যবহৃত কম্পিউটার, অফিস কক্ষ, দরজা-জানালার কাচ, ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কার্ড, টিকেট পাঞ্চ করার দরজা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ইত্যাদি ক্ষতি হয়েছে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমপি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যে হিসাব করেছি, তাতে মনে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত দুটো স্টেশন মিলিয়ে সংস্কার কাজ করতে ১৩৮ কোটি টাকার বেশি লাগবে না। দুটি স্টেশনের মধ্যে কাজীপাড়া স্টেশনটি তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে। ফলে সেটি সংস্কারকাজ শেষ করে দ্রুত চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন সম্পর্কে বলেন, নষ্ট হওয়া যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করার কারণে মিরপুর-১০ স্টেশনের সংস্কার কাজ করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে আগে যেমন এক বছরের কথা বলা হয়েছিল, অত বেশি সময় প্রয়োজন হবে না। তার অর্ধেক সময়ের মধ্যেই আশা করি স্টেশন খুলে দিতে পারব।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় মেট্রোরেল। তখন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটি ঠিক করে চালু করতে অন্তত ১ বছর সময় লাগবে এবং মেট্রোরেল চলাচল শুরু হলেও এই দুটি স্টেশনে ট্রেনের বিরতি ও যাত্রী সুবিধা বন্ধ থাকবে। তবে গত ২৫ আগস্ট ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন বাদে চালু করা হয় মেট্রোরেল। তাই এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে স্টেশন দুটি।

কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনের ১০০ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে ১ কোটিতে!

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন সংস্কার করে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাজীপাড়া স্টেশনের সংস্কারের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে।

গত ১৯ জুলাই হামলার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটির সংস্কার করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না।’

এছাড়া, সংস্কারের জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।

তবে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর কর্মকর্তারা এখন বলছেন, স্টেশন সংস্কারে এত বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়বে না।

কোটা আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ স্টেশনের নিচে পুলিশের বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে, যার ফলে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর হয়। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ক্ষয়-ক্ষতির মূল্যায়ন করা হয়।

মিরপুর-১০ স্টেশন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ছয়টি ভেন্ডিং মেশিন এবং কাউন্টারগুলিতে ভাঙচুর হয়েছে এবং এক ডজনেরও বেশি স্বয়ংক্রিয় দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজীপাড়া স্টেশনে কিছুটা কম ক্ষতি হয়েছে; সেখানে ভেন্ডিং মেশিন, কাউন্টার এবং কিছু স্বয়ংক্রিয় দরজা ভাঙচুর হয়েছে।

ডিএমটিসিএলের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছেন, কাজীপাড়া স্টেশন সংস্কারে ১ কোটি টাকারও কম খরচ হবে, যা আগে ১০০ কোটি টাকা বলা হয়েছিল। মিরপুর-১০ স্টেশনের যন্ত্রপাতি আমদানির কারণে কিছুটা বেশি খরচ হবে, তবে প্রকৃত খরচ এখনও নির্ধারিত হয়নি।

রউফ বলেছেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে দ্রুত কাজ করছি, এতে খরচ কমে গেছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেছেন— কাজীপাড়া স্টেশন এই মাসেই চালু হতে পারে।

দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘এ ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, বিগত সরকারের সময় উন্নয়নের নামে কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পগুলোর হিসাবও পুনরায় নিরীক্ষণ করা উচিত।’
সূত্র: বিবিসি বাংলা