২০২০ সালের নির্বাচনে কে হবেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী?
লন্ডনে তাঁর ঝটিকা সফরকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটা জিনিস স্পষ্ট করেছেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। ‘সবাই চায় আমি দাঁড়াই,’ তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ বিনয়ের সঙ্গে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন। ‘অনেক কিছুই বিবেচনায় আনতে হবে, স্বাস্থ্য তার মধ্যে একটা,’ ট্রাম্প বলেছেন।
অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত, নাটকীয় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে ট্রাম্পই হবেন তাঁর দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। রিপাবলিকান দলের কোনো কোনো ট্রাম্প-বিরোধী রাজনীতিক, যেমন সিনেটর জেফ ফ্লেক, ইঙ্গিত করেছেন দলের প্রার্থীপদের জন্য তাঁরা ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করবেন। তবে দলের সমর্থকদের দশ জনের নয়জনই ট্রাম্পের কাজে সন্তুষ্ট। তাঁরা যে ট্রাম্পকেই তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে দেখতে চাইবেন, তাতে ভুল নেই।
পক্ষান্তরে, প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রাটিক পার্টিতে কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দলের মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিষ্কার ছবি ফুটে ওঠেনি। আগ্রহী প্রার্থীর অবশ্য অভাব নেই। এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ জন কোনরকম ঘোষণা ছাড়াই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত প্রগতিশীল হিসাবে পরিচিত সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। ৬৯ বছর বয়স্ক ওয়ারেন তাঁর কঠোর ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থানের কারণে দলের প্রগতিশীলদের কাছে প্রিয়পাত্র। নারীদের কাছে তিনি পছন্দের, হিলারি প্রেসিডেন্ট হতে না পারায় যারা মনঃকষ্টে রয়েছেন, ওয়ারেন তাঁদের জন্য সান্ত্বনার কারণ হতে পারেন। এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, আগামী বছর নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক শুরুর আগে যতটা সম্ভব চাঁদার বাক্স ভরে তোলা। দলকে এক করার ব্যাপারেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত সপ্তাহে নেভাডায় এক সভায় ওয়ারেন বলেন, ট্রাম্প আমলে যে জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে, তা পরিষ্কার করতে চাই ঐক্যবদ্ধ ডেমোক্রাটিক পার্টি। আমি সেই কাজেই মনোনিবেশ করতে চাই। ওয়ারেনের এই মন্তব্য উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস টিপ্পনি কেটেছে, সে জঞ্জাল পরিষ্কারে তিনিই যে সেরা প্রার্থী, তিনি কেবল সে কথাটা বলাই বাদ রেখেছেন।
চাঁদা সংগ্রহে অবশ্য ওয়ারেনকে অনায়াসে পেছনে ফেলে দেবেন ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রাটিক পার্টির মনোনয়নের লড়াইতে হিলারিকে প্রায় পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন। দলের কর্তা ব্যক্তিদের একপেশে অবস্থান – কারো কারো ভাষ্যে ষড়যন্ত্র – তাঁকে দলের প্রার্থীপদ অর্জনে বাদ সাধে। অনেকের বিশ্বাস, হিলারি না হয়ে স্যান্ডার্স যদি ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতেন, তাহলে হয়ত ট্রাম্পকে ঠেকানো যেত। ভিন্ন কথা ভাবে এমন লোকেরও অভাব নেই। স্বঘোষিত সমাজতন্ত্রী হিসাবে অধিকাংশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্নে স্যান্ডার্সের অবস্থান আমেরিকার অধিকাংশ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বামে। ট্রাম্পকে ঠেকাতে হলে দরকার এমন একজন যে দলের প্রগতিশীল বা বামপন্থী অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে, পাশাপাশি মধ্যপন্থী ও স্বতন্ত্র ভোটারদেরও কাছে টানতে সক্ষম হবে।
তেমন না-বাম না-ডান একজন প্রার্থী হতে পারেন প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন তার বয়স ৭৫। বয়সের এই মনস্তাত্ত্বিক প্রতিবন্ধকতাটুকু অতিক্রম করতে পারলে তিনি একজন অত্যন্ত কার্যকর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবেন, একথা অধিকাংশ ডেমোক্রাটিক নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ মনে করেন। তিনি নিজেকে বারাক ওবামার যোগ্য উত্তরসূরি বলে ভাবেন, সে কারণে ওবামার সময়ে যে গণতান্ত্রিক কোয়ালিশন গঠিত হয়েছিল, তারা তাঁকেই সমর্থন জোগাবেন, এই হিসাবে থেকে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে তিনি অগ্রসর হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বাইডেন ২০২০ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন। অন্য কেউ মাঠে নেমে পড়ার আগে তিনি বল হাতে মাঠে নামতে চান, সেটাই তাঁর উদ্দেশ্য।
এই তিনজন ছাড়া আরো যে দুইজনের কথা সবাই বলাবলি করছে তাঁরা হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিনেটর কমলা হ্যারিস ও নিউ জার্সির আফ্রিকান-আমেরিকান সিনেটর কোরি বুকার। এঁরা দুজনেই প্রথম দফা সিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার যুক্তি দেখিয়ে কেউ কেউ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও এই মুহূর্তে তাঁরা প্রার্থিতার দৌড়ে নামে পড়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
শেষ পর্যন্ত কে দলের মনোনয়ন পান, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তি নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। ডেমোক্রাটরা আশা করছে এই নির্বাচনে তারা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে। সিনেটেও তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। তবে একদিকে অর্থনীতির তাজা অবস্থা, অন্যদিকে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার উঠতি অবস্থা সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিতে পারে, এমন আশংকাও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। মধ্যবর্তি নির্বাচনের ফলাফল আশানুরূপ না হলে ডেমোক্রাটিক ‘বেইস’ তাদের উৎসাহ হারাবে, যার প্রভাব মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় পড়তে বাধ্য।
এই রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের একটি অজ্ঞাত উপাদান হবেন বারাক ওবামা। তিনি এখনো ডেমোক্রাটিক পার্টিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। ওবামা ইঙ্গিত করেছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই তিনি রাজনৈতিকভাবে সরব হবেন, তাঁর লক্ষ্য, এই নির্বাচনে অধিক সংখ্যক ডেমোক্রাটিক প্রার্থীর নির্বাচন নিশ্চিত করা। জানিয়েছেন, এই লক্ষ্যে তিনি একদিকে দলের জন্য সেরা প্রার্থী সংগ্রহে সাহায্য করার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় বল জোগাতে অর্থ সংগ্রহে সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন