২০ লাখ শ্রমিক ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব

তিন কোটি লোকের দেশ সৌদি আরব। এর এক কোটিই বিদেশি। সত্তরের দশকে সৌদি আরবে তেল বাণিজ্য স্ফীত হওয়ার পর তাদের বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। এরপর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং নেপাল থেকে স্রোতের মতো মানুষ সৌদিতে গিয়ে জড়ো হতে থাকেন। এতে সৌদির অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। সেই তুলনায় অভিবাসী শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পাননি। বিশেষ করে ‘আকামা’ (অনুমতিপত্র) ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর তারা অধিকতর ক্ষতির শিকার হন। এরপরও নিজ দেশের চেয়ে ভালো আছি মনে করে তারা সেখানে আছেন। কেউ কেউ অবশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য করে সচ্ছল হয়েছেন। তাদের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশই খরচের টাকা তুলতে গিয়ে জান কয়লা করেছেন। এই সুখও তাদের দীর্ঘস্থায়ী হলো না।

হঠাৎ সৌদি আরব বিদেশি শ্রমিক খেদাও অভিযানে নেমেছে। গত বছরের মার্চ মাসে এই অভিযান শুরু হয়। ইতোমধ্যে ১০ লাখ প্রবাসী শ্রমিক নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। গত নভেম্বর মাসে বিদেশি শ্রমিকদের সৌদি ত্যাগের সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়। এরপরই ধরপাকড় অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রোজই হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিককে বিমানে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে তারা কমপক্ষে ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিককে দেশে পাঠাবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কাছে ছোট এক শহরের নাম মনফৌহা। এই এলাকাটির ওপর এখন সৌদি পুলিশের চোখ। শহরটিকে তারা বিদেশি অবৈধ শ্রমিকমুক্ত এবং বৈধ শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বদলে নিজ দেশের শ্রমিকদের নিয়োগ করতে তৎপর।এ মাসেই (জানুয়ারিতে) এখানে অবৈধ ইথিওপীয়দের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে দুজন ইথিওপীয় নিহত হন। এরপর ইথিওপীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা কোনো বৈধ শ্রমিককে বিদায় করছে না। কেবল ১৪ দেশের অবৈধ শ্রমিকদের আটক করা হয়েছে। তারা এখন তাদেরই ফেরত পাঠাচ্ছে। কিন্তু ইথিওপীয়দের ব্যাপারে সৌদি কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট অনমনীয়। এসব ইথিওপীয় ইয়েমেন সীমান্ত দিয়ে সৌদিতে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের অধিকাংশই নাকি দুর্বৃত্ত। খুনখারাবি, রাহাজানি তাদের নিত্যকর্ম। তাই কর্তৃপক্ষ এদের ব্যাপারে কিছুটা নির্মম। অভিযোগ আছে, ইথিওপীয়রাই সৌদিতে মাদক ও নারী ব্যবসা আমদানি করেছে। ইথিওপীয় রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে ৫০ হাজার ইথিওপীয়কে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরো ৩০ হাজারকে পাঠানো হচ্ছে।