মার্কটেম্পারিং, শিক্ষার্থীদের হুমকিসহ

২১ অভিযোগ নোবিপ্রবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে, পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীদের

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুস সাকিব খানের বিরুদ্ধে মার্ক টেম্পারিং,নারী শিক্ষার্থীকে পোষাক নিয়ে অপমান,শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদানসহ মোট ২১ টি অভিযোগ উঠেছে।তাকে দ্রুত চাকরি থেকে অব্যাহতি দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও পাশাপাশি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এর অপসারণ চেয়েও প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন তারা।

রবিবার (১১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দুপুর ১টায় সহকারী অধ্যাপক নাজমুস সাকিব খানের পদত্যাগ এবং ড. আনিসুজ্জামান এর অপসারণ চেয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরসম্বলিত অভিযোগ পত্রটি বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান ভূঁইয়া বরাবর জমা দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পত্রটি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান ভুইঁয়া বলেন, আমার অফিস থেকে একজন সহাকারী অভিযোগ পত্রটি গ্রহণ করেছে। আমি আগামীকাল এসে তা দেখব।

নাজমুজ সাকিব খানের র বিরুদ্ধে তোলা শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো হলো:.

ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষা আটকে রেখে স্টুডেন্টদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ জীবনের ক্ষতি করা; স্নাতোকত্তর পরীক্ষা কালক্ষেপণ করা, যাতে তারা শিক্ষক নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে না পারে; মার্ক টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এবং সেমিস্টারে অনিয়মিত শিক্ষার্থীকে অ্যাটেন্ডেন্সে ফুল মার্ক সহ অযাচিত মার্ক দেওয়া; ক্লাস টেস্ট এবং অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন না করেই নাম্বার প্রদান করা; ক্লাস টেস্ট ও অ্যাটেন্ডেন্সের মার্ক প্রদর্শন না করা; ওনার সান্নিধ্যে থাকা বিশেষ স্টুডেন্ট কে আলাদা ভাবে দেখা; ব্যাক্তিগত আক্রোশের কারণে স্টুডেন্টকে আলাদা করে ক্লাস রুমে অপমান করা; শিক্ষার্থীদের হেয় করে কথা বলা এবং ফোন কলে হুমকি দেওয়া। যার ফলে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হওয়ার নজির আছে; ক্লাস না করানো, করালেও কোন কোর্সে ২টির বেশি ক্লাস না নেওয়া। ওনার ভাষ্যমতে, সিনিয়র শিক্ষকদের প্রত্যকটি টপিকই একেকটি ক্লাস;

পরীক্ষার কয়েকদিন আগে গুডলাক নামক ক্লাস এর মাধ্যমে ৩ ক্রেডিট এর কোর্স এক ক্লাসে সম্পূর্ণ করা, যা কোর্স সম্পর্কে আমাদেরকে পূর্ণ কোন জ্ঞান দেয় না; ল্যাব কোর্সে শুধু থিওরি পরীক্ষা নিয়ে নামমাত্র কোর্স সম্পূর্ণ করা; ল্যাবরেটরিকে নিজস্ব অফিস হিসেবে ব্যাবহার করা; ছাত্র ছাত্রীদের সম্মুখে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীর সাথে অসদাচরন; ক্লাসে ১০০% শিক্ষার্থীর উপস্থিতি না থাকলে ক্লাস না নেওয়া এবং ক্লাস টাইম দিয়েও টাইম মতো শুরু না করা বা যথাযথ কারণ ছাড়া ক্লাস ক্যান্সেল করে দেওয়া; ক্লাসে শিক্ষার্থীরা কোনো প্রশ্ন করলে তার বিপরীতে তাকে অপমান করা; সিটিতে এক্সট্রা পেপার চাওয়ায় অপমান করে শিক্ষার্থীর খাতা ছিঁড়ে ফেলা; শিক্ষার্থীদের ফিল্ড ট্রিপের ব্যায়িত খরচের যথাযথ হিসাব না দেওয়া; শিক্ষার্থীদের পার্সনাল লাইফ নিয়ে হেনস্তা করা; নারী শিক্ষার্থীর পোশাক পরিধান নিয়ে অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া নিয়ে, অফিস রুমে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি দেওয়া এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করা এবং বিভাগে স্বৈরাচারী মনোভাব কায়েম
করা।

সহপাঠীদের সামনে অপমান করার অভিযোগ করে ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাজনীন নাহার মীম বলেন, “আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক জনাব নাজমুস সাকিব খান শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে সহপাঠীদের সামনে কটুক্তি করতেন এবং উনার একান্ত অনুগত ছাত্রদের বিশেষ নজরে দেখা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে উনি আমার ড্রেস আপ নিয়ে যথেষ্ট অপমান করে ক্লাস রুম থেকে বের করে দিয়েছিলেন। যা আমার জন্য অত্যন্ত অপমান জনক। আমি এসবের প্রতিবাদ জানাই।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান রিমন এর বিষয়ে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিহা সাঈদ জানান ” ডিপার্টমেন্টাল যেকোনো ইস্যুর, সমস্যা বা একাডেমিক কাজে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো আনিসুজ্জামান কে আমরা সহজে পাই না। অধিকাংশ সময়েই তিনি ডিপার্টমেন্টে অনুপস্থিত থাকেন। তাছাড়াও তার সাথে আমাদের ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীর সাথে পরিচয় তেমন না থাকায়, সমস্যা সমূহ সহজভাবে বলা সম্ভব হয় না। আমাদের প্রয়োজন নিজস্ব ডিপার্ট্মেন্টের যোগ্য শিক্ষক যার সাথে স্বস্তির সাথে যেকোন সমস্যার কথা আমরা বলতে পারব। এজন্য তাকে আমরা অবাঞ্চিত ঘোষণা করলাম।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক নাজমুস সাকিব খান বলেন, ” হটাৎ করে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ২১ টি অভিযোগ কেন আসলো বিষয়টা চিন্তার বিষয়। আমি আজকে অনেকদিন যাবত শিক্ষকতা করছি। কয়েকটা ব্যাচ ডিগ্রি শেষ করে বের হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী আমার সাথে গবেষণা করেছে এবং গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি এখন কেনো এত অভিযোগ? তারা কি পারত না বিভাগের প্রধান, ডিন, প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিতে? আর তারা কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছে? আমি জানতে পেরেছি তারা কিভাবে পদত্যাগের দাবিতে সমর্থক জোগাড় করেছে। তারাকি এগুলো নিজেরা করতেছে নাকি অন্য কারো প্ররোচনায় এমন করতেছে? মার্ক টেম্পারিংয় এর বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে মনে করি। কারণ পরীক্ষার খাতা ২ জন শিক্ষক দেখেন। আর পোশাক নিয়ে আমি কটুক্তি করিনি আমি তাদেরকে বুঝিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমি যেসব কোর্সের ক্লাস নিয়েছি সেসব কোর্সে কি ফল বিপর্যয় হয়েছে? আর শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমরা যেন আন্দোলনে না যাই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা লিখে আমি একটা পোস্ট করেছিলাম এটার যুক্তি হচ্ছে আমাদের শিক্ষকদের দাবি যেহেতু মেনে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের দাবিও যেন তিনি মেনে নেন। পরীক্ষা এবং রেজাল্ট আটকে রাখা কি শুধু বিভাগের প্রধানের পক্ষে আটকে রাখা সম্ভব? বাকি শিক্ষকরা কেন বিভাগের প্রধানকে ফোর্স করেনি? বিভাগের প্রধানের উপর কেন অনাস্থা জ্ঞাপন করেনি? এমনকি কয়েকজন শিক্ষক একাডেমিক মিটিংয়েও উপস্থিত থাকতেন না। আর শিক্ষার্থীদের হুমকির যে বিষয়টি বলা হচ্ছে তা মিথ্যে। আমার ফেসবুক আইডি ক্লোন করে কেউ এমনটা করছে।

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানেকে কল দিলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।