২৫ বছর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে ভারতীয় হিন্দু!
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি মসজিদ নিয়মিত ঝাড়ু দিয়ে আসছেন রম্ভীর কশ্যপ নামের এক হিন্দু। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণও করছেন তিনি। ২০১৩ সালে দাঙ্গার সময় মুজাফফরনগরের নানহেদা গ্রামের ১২০ বছরের পুরোনো এই মসজিদ ভেঙে ফেলতে চেয়েছিল একদল দাঙ্গাকারী। তখন কিছু গ্রামবাসীর সমর্থনে এটিকে রক্ষা করেন রাজমিস্ত্রি রম্ভীর।
এরপর পাঁচ বছর কেটে গেছে। এখনও ৫৯ বছর বয়সী এই রাজমিস্ত্রি গ্রামের একমাত্র মসজিদটির দেখভাল করছেন। তিনি সকালের দিকে মসজিদ ঝাড়ু দেন এবং সন্ধ্যায় এখানে মোমবাতি জ্বালান। এমনকি রমজান মাস আসার আগেই মসজিদের চুনকামের কাজ করান তিনি।
মসজিদ থেকে ১০০ মিটার দূরেই থাকেন রম্ভীর। তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমি মসজিদটির চারপাশে খেলা করেছি। আমার কাছে এটা প্রার্থনার জায়গা, যার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। যেহেতু মসজিদটি দেখার কেউ নেই, তাই আমি সেই দায়িত্ব পালন করেছি।
ঘটনাক্রমে গ্রামটিতে এখন কোনও মুসলিম নেই। জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে দলিত ও পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠী বসবাস করে। রম্ভীর বলেন, স্বাধীনতার আগে গ্রামটিতে অনেক মুসলিম বাস করতেন। তারা এখান থেকে চলে গেছেন। এখন মাঝে মাঝে দর্শনার্থীরা এসে এখানে নামাজ পড়েন।
পাশের গ্রাম খেড়ি ফিরোজাবাদ থেকে আসা খুসনসীব আহমেদ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমি কয়েক বছর আগে এই গ্রামে এসেছিলাম এবং একজন হিন্দু মসজিদটির দেখভাল করছে দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমি এখানে নামাজ পড়েছিলাম। বিদ্বেষের বিপরীতে এখানে অনেক ভালোবাসার উদাহরণ আছে।
রম্ভীরের এই মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণে মুগ্ধ গ্রাম প্রধান দারা সিংহ। তিনি বলেন, প্রতি রমজান মাসের আগে নিজের অর্থ খরচ করে মসজিদ চুনকাম করান রম্ভীর। মাঝে মাঝে তার পরিবারের সদস্যরাও একাজে তাকে সহযোগিতা করে।
স্থানীয় ইসলামিক স্কুল ‘দারুল উলুম’র সংগঠক ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা আশরাফ উসমানি বলেন, এটা ভারতীয়দের সেই দৃষ্টিভঙ্গি, যা তাদেরকে মহান করেছে। ভারতজুড়ে নানহেদার মতো ঘটনা অনেক আছে।
তিনি বলেন, দেশভাগের পর যখন এখানকার বিশেষ করে পাঞ্জাবের মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যায়, তখন শিখ ও হিন্দুরা মসজিদগুলো আগলে রাখে। সেগুলো এখনও টিকে আছে। একইভাবে মুসলিমরা মন্দির আগলে রাখার ঘটনা আছে।
রোববার (৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮) টাইমস অব ইন্ডিয়া’তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন