৩৭ লাখ টাকা ডাকাতিতে ছাত্রলীগের ৬ কর্মী
রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকা থেকে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুজন আসামি ডাকাতি করার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতি করে নেওয়া প্রায় তিন লাখ টাকা।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন আবুল হাসান মিঠু, দেওয়ান নাসির উদ্দিন ওরফে সোহাগ, তারিকুল ইসলাম ওরফে টগর, আওলাদ হোসেন, মাকসুদ ও রবিন। এঁরা সবাই সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার ও বংশাল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।
বংশাল থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, আবুল হাসান বংশাল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হোসাইন বলেন, আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া দেওয়ান নাসির উদ্দিন ওরফে সোহাগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তিনি বহিষ্কৃত। নাজমুল হোসাইন বলেন, বাকি চারজন আসামিও ছাত্রলীগের কর্মী বলে তিনি শুনেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা থেকে সোনা বিক্রি করতে আসেন তরুণ সোনা ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র দত্ত ও তাঁর বন্ধু বিধু মিত্র। ১৯ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে সোনা বিক্রি করার পর টাকা নিয়ে রাজধানী মার্কেটে যাওয়ার জন্য রিকশা নেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা যখন ইসলামপুর হয়ে সূত্রাপুরের কুঞ্জ বাবু লেনে পৌঁছান, তখন হঠাৎ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন ব্যক্তি রিকশার গতিরোধ করে। পরে তাঁদের রিকশা থেকে নামিয়ে পাশের কাজী আবদুর রউফ রোডের ভাঙা বাড়ির সরু গলির ভেতরে নেওয়া হয়। তখন আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দুজনের কাছে থাকা ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ওই দুর্বৃত্তরা। নেওয়া হয় তাঁদের মুঠোফোনও। এ ঘটনার পর সোনা ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র দত্ত বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় ডাকাতির মামলা করেন।
ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে ডাকাত দল শনাক্ত
দিনদুপুরে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ডাকাতির পর তদন্ত শুরু করে সূত্রাপুর থানা-পুলিশ। তদন্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, আগে থেকে ডাকাত দল এই দুই সোনা ব্যবসায়ীর গতিবিধি অনুসরণ করে আসছিল। তাঁতীবাজারে ছিল দলের কিছু সদস্য। আর সূত্রাপুরে ছিল আরেক দল। যখন দুজন সোনা ব্যবসায়ী রওনা দেন, তখন সূত্রাপুরে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তাঁদের মারধর করে টাকা লুট করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রাপুর থানার এসআই নাজমুল হোসাইন বলেন, ডাকাতি করে পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী বিধান চন্দ্র দত্ত বলেছেন, ডাকাতেরা তাঁদের বলেন, বাঁচতে চাইলে যা কিছু টাকা আছে তা যেন দিয়ে দেয়, না দিলে জানে শেষ করে ফেলবে। বুঝে ওঠার আগে তার পেটের সঙ্গে বাঁধা কালো বেল্টের ভেতর থাকা ১২ লাখ ৫০ হাজার, পায়ের অ্যাংলেটের ভেতরে থাকা ৫ লাখ টাকা নেয় ডাকাতেরা। আর তার বন্ধু বিধু মিত্রের পেটের সঙ্গে বাঁধা বেল্টের ১৪ লাখ ও পায়ের অ্যাংলেটে ৬ লাখ টাকা লুট করে নেয়।
ডাকাত দলের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার
মামলার মাত্র দুই দিনের মাথায় নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁর জবানবন্দিতে উঠে আসে বংশাল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসান মিঠুসহ অন্যদের নাম।
এরপর দিন আবুল হাসান মিঠু ও রবিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে পুলিশ। তবে আদালতে এসে দুজন জবানবন্দি দেননি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আদালত আবুল হাসান ও রবিনের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তাঁরা পুলিশ হেফাজতে আছেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি আসামি তরিকুল ইসলাম, আওলাদ হোসেন ও মাকসুদকে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে আওলাদ হোসেন সোমবার ডাকাতির ঘটনার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, দুজন সোনা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতি করে নেওয়া সাড়ে ৩৭ লাখ টাকার মধ্যে নাসির উদ্দিন সোহাগের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, বংশাল থানা ছাত্রলীগের নেতা আবুল হাসানের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা, আওলাদ হোসেনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা, মাকসুদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং তারিকুল ইসলাম টগরের কাছ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে; যা মামলার আলামত হিসেবে গণ্য।
তদন্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, আসামি নাসির উদ্দিন সোহাগ ও আওলাদ হোসেন তাঁদের জবানবন্দিতে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেছেন। এঁরা হলেন আলাউদ্দিন, শফিকুল ও মাহবুব সুমন। এর মধ্যে আলাউদ্দিন একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী, বাড়ি কমিল্লায়। তাঁর কাছেই ডাকাতির বেশির ভাগ টাকা আছে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল বলেন, শফিকুল ও মাহবুব সুমন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী।
বাদী সোনা ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘আমার সোনা ব্যবসার বয়স কম। নিজের কিছু পুঁজি ও মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে ব্যবসা করছিলাম। বুঝতেই পারিনি দিনের বেলা আমাদের ডাকাত দল ধরবে, নিয়ে যাবে সব টাকা। এখন বাড়িতে পাওনাদার আসছেন। কীভাবে টাকা শোধ করব জানি না।’
বংশাল থানার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উল্লাহ ওয়ালিদ বলেন, দিনদুপুরে সোনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা লুট করার ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ আবুল হাসান মিঠুকে গ্রেপ্তার করেছেন বলে তিনি জানতে পারছেন। আবুল হাসান বংশাল থানা ছাত্রলীগের নেতা। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ডাকাতির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সূত্র : প্রথম আলো
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন