৫২ বছর পর বাজবে হুইসেল
খুলনা-কলকাতা রেলপথে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেন যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মাধ্যমে ৫২ বছর পর আবার এ পথে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। অর্ধশতাব্দী আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া হুইসেল শোনা যাবে আবার।
বন্ধন এক্সপ্রেসের আটটি কোচে যাত্রীদের জন্য আসন রয়েছে ৪৫৬টি। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এর প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ২৭৪টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। অর্ধশতাব্দী পর এ যাত্রার সাক্ষী হতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা।
খুলনার স্টেশনমাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার ট্রেনটি চলবে। সকালে কলকাতা থেকে ছেড়ে সেটি দুপুরে খুলনায় আসবে। সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যার আগে ফের এটি কলকাতায় পৌঁছাবে।
চলতি মাসের ৯ তারিখ ঢাকা থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুইচ টিপে বন্ধন এক্সপ্রেসের পরীক্ষামূলক যাত্রার সূচনা করেন।
খুলনা রেলস্টেশনের প্রধান টিকিট বুকিং সহকারী (ভারপ্রাপ্ত) মো. মেহেদী হাসান গতকাল বিকেলে বলেন, ট্রেনটি ছাড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে। গতকাল নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ২০০টি এসি চেয়ার ও ৭৪টি এসি কেবিন আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। ভিসা ও পাসপোর্ট দেখিয়ে ট্রেনের আসন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। গতকাল খুলনায় সারা দিন বৃষ্টি হওয়ায় টিকিট বিক্রি কম হয়েছে।
মেহেদী হাসান জানান, আটটি যাত্রীবাহী বগির ট্রেনটিতে ৪৫৬ জন যাত্রী উঠতে পারবেন। এতে এসি কেবিন আসন থাকছে ১৪৪টি আর ৩১২টি এসি চেয়ার আসন। এসি কেবিন আসনের জন্য ১ হাজার ৩১১ টাকা ভাড়ার সঙ্গে ১৮৯ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক), ৫০০ টাকা ভ্রমণকরসহ মোট ভাড়া ধরা হয়েছে দুই হাজার টাকা। আর এসি চেয়ারের ক্ষেত্রে ৮৭৪ টাকা ভাড়া, ১২৬ টাকা মূসক, ৫০০ টাকা ভ্রমণকরসহ মোট ভাড়া ধরা হয়েছে দেড় হাজার টাকা।
অপু লরেন্স বিশ্বাস নামের এক চিকিৎসক ট্রেনে যাওয়ার জন্য টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভীষণ উত্তেজিত। শত ব্যস্ততার মাঝেও ইতিহাসের সাক্ষী হতে টিকিট কিনেছি। এই পথ ধরেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভারতে যাতায়াত করত। সেই পথ ধরে এবার আমরাও যাব।’
আবদুল হাই নামের আরেকজন বলেন, ‘এই ট্রেন চালু হওয়ায় আমরা উচ্ছ্বসিত। বেড়াতে যাচ্ছি। প্রথম যাত্রার সাক্ষী হতে আগেভাগেই টিকিট কেটেছি। স্থলপথে যেতে ইমিগ্রেশন কাস্টমসে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়, এখানে তেমনটা হবে বলে মনে করছি।’
টিকিট সংগ্রহকারী আরেক যাত্রী বদিউল আলম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান বিবেচনায় ভাড়াটাও খুব বেশি মনে হচ্ছে না। যাত্রার শুরুতেই যদি খুলনা স্টেশনে অভিবাসন এবং শুল্ক বিভাগ পাসপোর্ট-ভিসা-কাস্টমসের পরীক্ষা সেরে নিত, তাহলে ভালো হতো।’
জানতে চাইলে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (পাকশী) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘আপাতত ভাড়া কমানো বা খুলনা স্টেশনে অভিবাসন এবং শুল্ক বিভাগের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই। সবে পরিষেবাটি চালু হচ্ছে। আমরা আস্তে আস্তে ভেবে দেখব।’
রেলওয়ে ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত যেতে ট্রেনটি ১৭৫ কিলোমিটার অতিক্রম করবে। অতীতে খুলনা থেকে ভারতের শিয়ালদহের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এ ট্রেনের হুইসেল থেমে যায়।সূত্র : প্রথম আলো
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন