৫৭ ধারায় খুবই নগণ্য সংখ্যক সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছে
আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় খুবই নগণ্য সংখ্যক গ্রেফতার হয়েছে বলে দাবি করলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বুধবার (১২ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় অনেক সাংবাদিক নিগৃহীত হচ্ছে এমন তথ্য সঠিক নয়। বাংলাদেশে দুই হাজার ৮০০টির বেশি পত্রপত্রিকা এবং ১ হাজার ৮০০টির বেশি অনলাইন পোর্টাল রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন করে সাংবাদিক থাকলে কত হাজার সাংবাদিক কাজ করছে তা বোঝা যায়। সংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য অর্থাৎ দু’একজন সাংবাদিক এই আইনে গ্রেফতার হয়েছে। আর তারা আদালতে যাওয়ার দুই-একদিনের মধ্যে জামিনও পেয়েছে।’
দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তার জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দণ্ডবিধি ৫৭ এবং ৫৬ ধারাটি গণমাধ্যম বা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়নি। এটি একটি সাধারণ দণ্ডবিধি। বর্তমান সরকার যাত্রা শুরুর আগেই আইনটি করা হয়েছিল। তবে সাংবাদিকদের জন্য তা করা হয়নি। এই আইনটি করা হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের জন্য। যে কোনও নাগরিক সামাজিক গণমাধ্যম যেমন ফেসবুক ও টুইটারে যদি অন্যের চরিত্রহনন করে পোস্ট দেন তাহলে তাকে এই আইনের আওতায় আনা হবে।’
ডিজিটাইটেশনের ফলে গণমাধ্যমের প্রসার ও বিকাশ ঘটেছে জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পরিধি বেড়েছে। কেউ যদি অপব্যবহার, চরিত্রহনন, নিন্দা, মিথ্যাচার ও বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন বা বিদ্বেষ তৈরি করে সেখানে এই আইনটি প্রয়োগ হয়। অনলাইন বা সামাজিক গণমাধ্যমে এমন কাজে লিপ্ত হলে সেক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ হয়। সাংবাদিকদের বেলায় শুধু প্রয়োগ হয় এটি, এমন তথ্য সঠিক নয়।’
হাসানুল হক ইনু জানান, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা, নারীর সম্মান, শিশু নিরাপত্তা, রাষ্ট্র ও ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার অনুষ্ঠান নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অনিয়ম হলেই কেবল আইনটি প্রয়োগ করা হয়।
আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার মামলা জামিন অযোগ্য তথ্যটি সঠিক নয় উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘এটাকে অজামিনযোগ্য বলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এই আইনে যারা গ্রেফতার হয় তারা কিন্তু একটা পর্যায়ে জামিনযোগ্য। এই আইনে যারা গ্রেফতার হয়েছে তার সবাই জামিন পেয়েছেন। নিম্ন আদালতে না পেলেও উচ্চ আদালতে ঠিকই জামিন মিলছে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে ৩০-এর অধিক আইন রয়েছে সেগুলো জামিনযোগ্য নয়। কিন্তু প্রতিটি জায়গাতেই উচ্চ আদালতে গেলে বিচারকরা যদি মনে করেন তাহলে জামিন দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ওপর এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখা হয় বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী। কোনও জায়গায় এই আইনের বরখেলাপ বা হয়রানির ঘটনা হলে সেখানে তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে বলেও জানান তিনি। তার কথায়, ‘কোনও মিথ্যাচার হয়ে থাকলে বিচারকরা তা পর্যবেক্ষণ করে আসামিকে জামিন দিচ্ছেন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তায় সরকার নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সাইবার অপরাধ মোকাবিলা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। সেটি আসার পরে আইনমন্ত্রী ও সরকার বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবে ৫৭ ধারার আইনটি রাখা দরকার আছে কিনা। তবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আইনটি মানবাধিকারবিরোধী বলে মনে করি না। বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এতদিনে এটি উচ্চ আদালতে গেলেই বাতিল হয়ে যেত। আজ পর্যন্ত কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রমাণ করতে পারেনি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন