৫ কারণে বিকল্প প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করছে বিএনপি। সোমবার ১০৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনটি বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও একটি বিভাগের আংশিক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে, কোনো কোনো আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো দুই বা ততোধিক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দু’একটি আসনে একই পরিবারের দুজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে অনেক এ ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপির প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোনো কোনো আসনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থীকে দলের প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বরিশাল-৩ আসন। এ আসনে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সেলিমা রহমানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ দুজনই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।

বরিশাল-২ আসনে দেয়া হয়েছে শরফুদ্দিন সান্টু ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। এদের একজন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, অন্যজন যুগ্ম মহাসচিব।

কোনো কোনো আসনে একই পরিবারের দুজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যেমন সিরাজগঞ্জ-২ আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

বিএনপি কী কারণে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নে একাধিক প্রার্থী দিল, এ নিয়ে সোমবার দিবানিশি দলের ভেতর-বাইরে আলোচনা হয়েছে। অনেক প্রার্থী ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটি সুচিন্তিতভাবেই কোনো কোনো আসনে দুই বা ততোধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিষয়টি কাকতালীয়ভাবে হয়নি।

একই আসনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার কারণ হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হচ্ছে। দলের সিনিয়র নেতা ছাড়া প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে আমরা দুজনকে মনোনয়নের চিঠি দিচ্ছি। যাতে কোনো কারণে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে অন্যজন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারণে একই আসনে দুই বা ততোধিক প্রার্থী দেয়া হচ্ছে।

প্রথমত বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া ঠেকানো;

দ্বিতীয়ত মামলার কারণে প্রার্থিতা বাতিল হলে আসন শূন্য না রাখা;

তৃতীয়ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা এখনও না হওয়া;

চতুর্থত ঋণখেলাপির কারণে কারও প্রার্থিতা বাতিল হলে যেন আসন শূন্য না থাকে।

পঞ্চমত দলবদল করতে না দেয়া।

বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তাদের প্রায় সবার নামে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। অনেকের নামে দুর্নীতির অভিযোগে কিংবা ফৌজদারি অপরাধেও মামলা রয়েছে।

সে ক্ষেত্রে মামলার কারণে অনেকেরই মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দলের হাইকমান্ড এক আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছে।

কোনো কোনো আসনে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কোনো কোনো আসনে কথিত সংস্কারপন্থীদেরও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এবং হবে।

এমতাবস্থায় কেউ কেউ মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উঠতে পারে। তাই বিদ্রোহ ঠেকাতে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে।

বিএনপির এবার নির্বাচনী সঙ্গী দুটি রাজনৈতিক জোট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল। এ দুটি জোটের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত দরকষাকষি এখনও চলছে। তাই কোনো কোনো আসনে দলীয় প্রার্থীকে বসিয়ে দেয়া হতে পারে।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী ঋণখেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় রযেছেন। এ ক্ষেত্রে কারও মনোনয়ন বাতিল হলে যেন কোনো আসনটি যেন প্রার্থী শূন্য না থাকে, সে জন্য বিকল্প প্রার্থী রাখা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি প্রার্থীদের হাতে তুলে ধরা হয়েছে। যারা মনোনয়ন পাননি তাদের অনেকেই দলবদল করছেন। যেমন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদ গতকাল গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি যোগ দিয়েছেন বিএনপিতে।

বিএনপিও একই আশঙ্কা করছে। দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে কেউ যেন অন্য দলে চলে না যেতে পারে, সে জন্য একই আসনে একাধিক প্রার্থী রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বসে সমঝোতার পথ খোলা রেখেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ১২ বছরে বিএনপির নেতাদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। অনেকের মামলার সাজাও হয়েছে। কেউ কেউ এখনও কারাগারে রয়েছেন।

আবার নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আদালতকে ব্যবহার, অনেক নেতার নামে থাকা মামলাগুলোর শুনানি পিছিয়ে জামিন বাতিল করা হচ্ছে। ফলে নির্বাচনের আগে কোনো প্রার্থীর সাজা হলে বা কেউ কারাগার থেকে মুক্ত না হতে পারলে, সেখানে বিকল্প প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেয়া হবে।

এ ছাড়া কারও প্রার্থিতা ঋণখেলাপির কারণে বাদ পড়ে যেতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, দলে স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান করছে।

এ কারণে তিনি এবং তার ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন কুমিল্লার একই আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন। এখন কোনো কারণে যদি খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করতে না পারেন, তা হলে সেই আসনে উনার ছেলে নির্বাচন করবেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়ার কারণে সবাই চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় মাঠে থাকবে। ফলে তৃণমূলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিও বাড়বে।

তবে শেষ পর্যন্ত এক আসনে বিএনপি, ২০-দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সমঝোতা করে একজন প্রার্থীই থাকবেন বলে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন।