৭ জেলায় সড়কে গেল ১৬ প্রাণ
দেশের ৭ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৪৪ জন। বুধবার (২৮ নভেম্বর) রাতে থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
ফেনী: জেলার শর্শদী রেলক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী বাস রেললাইনে উঠে যাওয়ার পর ট্রেনের ধাক্কায় বাসের এক শিশুসহ ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় সদর বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস কৈখালী বাজার যাচ্ছিলো। পথে শর্শদী রেলক্রসিং পাড় হওয়ার সময়, ময়মনসিংহগামী নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেললাইনের ওপর উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই ৫ জনের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
একজন মৃতের স্বজন বলেন, আমার ভাইকে এনে দেন আপনার শুধু।
ফায়ার সার্ভিস উপ সহকারী তৈফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখানে এসে ৪ জনের লাশ মৃত অবস্থায় পেয়েছি। কোন গেটম্যান ছিল না। গেটম্যান না থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদি গেটম্যান থাকতো তাহলে বাস উঠতে পারতো না আর দুর্ঘটনাও ঘটতো না।
ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে দুই বাস ও একটি ট্রাকের মধ্যে ত্রি-মুখী সংঘর্ষে ৪ নারী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০/২৫ জন।
বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার কড্ডার মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম পরিচয় জানা যায়নি।
কড্ডার মোড় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আসাদ আলী জানান, সকালে ঢাকা থেকে বগুড়াগামী আলিফ পরিবহনের একটি বাস কড্ডার মোড়ে এসে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মিনিবাস ও এর পাশের একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হলে আলিফ পরিবহনের বাসটি রাস্তার ওপর ও মিনিবাসটি পাশের খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। বাস থেকে আনুমানিক ৩০ বছরের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ২০/২৫ জনকে। উদ্ধার কাজ চলছে।
মুন্সীগঞ্জ: জেলার গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লরি ও এ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী আব্দুর রাজ্জাক (৭০) নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে গজারিয়া উপজেলার দরি বাউশিয়া এলাকায় লরি ও এ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলেই রোগী আব্দুর রাজ্জাক নিহত হয়। এসময় এ্যাম্বুলেন্সে রোগীর সাথে আসা একই পরিবারের লাকী বেগম (৩০) ইফতেকা (৩৫) মো.বাতেন (২৪) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা চট্রগ্রাম সড়কে দুর্ঘটনা কারণে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত হাইওয়ে সড়কের একাপাশ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরে ফায়ার সার্বিস ও পুলিশের যৌথ উদ্দেগ্যে উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানায়, সকাল চর বাউশিয়া এলাকায় লরির ও এ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় এ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী আব্দুর রাজ্জাক নিহত হয়। রোগীর সাথে আশা অপর তিন আহত হয়। তিনি বলেন সড়কে দুর্ঘটনা কারনে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় ইটবোঝাই ট্রলি ও সিএনজিচালিত থ্রি হুইলারের সংঘর্ষে আনোয়ার হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন।
বুধবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার সময় নাটোর-নলডাঙ্গা সড়কের বিলপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার হোসেন নাটোর শহরের বড়গাছা হাফরাস্তা এলাকার মৃত সুজাউদ্দিনের ছেলে।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুর রহমান জানান, সন্ধ্যার দিকে সিএনজিচালিত থ্রি হুইলারটি যাত্রী নিয়ে নাটোর শহরে যাচ্ছিলো। পথে নাটোর-নলডাঙ্গা সড়কের বিলপাড়া এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা ইটবোঝাই একটি ট্রলির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় আনোয়ারসহ অন্তত ৬ জন আহত হন।
এ অবস্থায় স্থানীয়রা আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে আনোয়ার হোসেন মারা যান।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের শিবালয়ে প্রাইভেটকারচাপায় ওমর আলী (৫৫) নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিবালয়ের মুশুরিয়া এলাকার মধুমতি সিএনজিস্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত অটোরিকশাচালক ওমর আলী শিবালয়ের উথুলী ইউনিয়নের কাতরাসিন এলাকার বাসিন্দা।
বরংগাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়ামিন উদ-দৌলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অটোচালক ওমর আলী ভোরে মধুমতি সিএনজিস্টেশনে গ্যাস সরবারহের জন্যে যাচ্ছিলেন। পথে ওই এলাকায় গেলে দ্রুতগতির একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে পাটুরিয়ামুখী অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশারচালকের মৃত্যু হয়।
এসময় প্রাইভেটকারটি ধুমড়ে-মুচড়ে গেলেও গুরুতর আহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্যে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
পাবনা: পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন-বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার ভ্যানচালক আকবর আলীর স্ত্রী রিমি বেগম (৪০) ও মেয়ে বর্ষা (৮)। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আকবর। তিনি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, সকালে বাড়ি থেকে নিজের ভ্যানে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শহরে আসছিলেন আকবর। এ সময় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত একটি নছিমন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের ভ্যানটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মেয়ের মৃত্যু হয়। এসময় গুরুতর আহত হন আকবর ও তার স্ত্রী রিমি। এ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান রিমি।
তিনি আরো জানান, ঘটনার পর নছিমন ফেলে চালক পালিয়ে গেছেন। তাকে আটক করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
বাগেরহাট: জেলার মোল্লাহাটে ট্রাকের ধাক্কায় আহত দুই মোটরসাইকেল আরোহী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তারা দুইজনই স্কুলশিক্ষক।
বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার জয়ডিহি কাহালপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনায় তারা গুরুতর আহত হন। রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনই মারা যান।
নিহত দুই স্কুলশিক্ষক হলেন- মোল্লাহাট উপজেলার সরোসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম দুলাল (৪৫) ও একই উপজেলার সরোসপুর দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাহারুল আলম মোল্লা (৪৩)।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম কবির জানান, মোল্লাহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন ওই দুই শিক্ষক। গোপালগঞ্জ থেকে খুলনাগামী একটি ট্রাক মহাসড়কে তাদের মোটরসাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
এতে দুই মোটরসাইকেল আরোহী ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে দুইজনই মারা যান।
ওসি আরো বলেন, ট্রাক চালক পালিয়ে গেছে। ট্রাকটিকে শনাক্ত করতে কাজ চলছে। উপজেলার নিহতরা সরোসপুর গ্রামের বাসিন্দা। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন