৮ ফেব্রুয়ারি আ.লীগ-বিএনপির পরিকল্পনা কী?

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এই রায়কে ঘিরে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা পরস্পরকে হুঁশিয়ার করেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতিবাচক রায় হলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। অন্যদিকে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে দমনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বলেছেন, দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় ‘নেতিবাচক’ কোনো রায় হলে তার পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে। একই দিন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, এই মামলার রায় নিয়ে আবার কোনো জ্বালাও-পোড়াও হলে তাতে বিএনপিই পুড়ে ‘ছারখার হয়ে যাবে’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রায় ঘিরে কেউ ‘বিশৃঙ্খলা বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের’ চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেবে।

দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি এই অবস্থানের মধ্যেই শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৮টায় চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রায় সামনে রেখে বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দলের অনেক স্থায়ী কমিটির সদস্য।

আরাফাত রহমান কোকোর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি যেটা আমরা আশঙ্কা করছি, সেদিন নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে প্রকাশ পায়, তাহলে আমার মনে হয়, তখন থেকে এ সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে।’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘সময় বলে দেবে কে নেতৃত্ব দেবে, আর কে রাজপথে থাকবে। সরকারকে বলব, জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর কারাগারেই আছি। আমরা সবাই খালেদা জিয়ার জেল পার্টনার।’ খালেদার রায় ঘিরে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি না দিলেও গয়েশ্বর বলছেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করার ঘোষণা দেই বা না দেই, এমন কিছু যে ঘটবে না সে নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না।’

এদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদের বক্তব্যে পাল্টা হুঁশিয়ারি আসে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম, তারা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যদি শাস্তি হয়, তবে নাকি দেশে আগুন জ্বলবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, রিজভী সাহেব ও বিএনপি নেতাদের বলতে চাই, আপনারা দেশে অতীতেও আগুন জ্বালিয়েছেন। সেই আগুনে আপনারা জ্বলেছেন। আবারো যদি আগুন জ্বালানের চেষ্টা করেন, তাহলে সেই আগুনে আপনারাই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন।’

তার ভাষায়, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন আদালত ‘স্বাধীন ছিল না’ বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের ইচ্ছায় রায় হয়। তিনি বলেন, ‘তারা মনে করেন, তাদের সময়ে আদালত যেভাবে কাজ করতেন, এখনো মনে হয় আদালত সেভাবেই কাজ করেন। এখন আদালত স্বাধীন। খালেদা জিয়া হয়তো খালাসও পেতে পারেন।’

হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে চলছে, তখন ‘একটি চক্র’ দেশকে অস্থিতিশীল করার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা, খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া-আসার ঘটনা, মির্জা ফখরুলের বক্তব্য, রিজভী আহমেদের বক্তব্য সবগুলো একই সূত্রে গাথা।’

খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিচারের রায় হবে। রায়ের আগে বা পরে দেশে বিশৃঙ্খলা চালানোর অপচেষ্টা করা হবে। সরকারি দলের নেতাকর্মী হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের, পেট্রোলবোমা বাহিনীকে প্রতিহত করতে অতন্দ্র প্রহরীর মতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’

দুই পক্ষের এই বক্তব্য নিয়ে শুক্রবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এই রায় ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। পেশাদার এবং জনগণের বন্ধু। সুতরাং জনগণের ক্ষতি হলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঢাকার বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঘোষণা করা হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ মেয়াদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলার প্রধান আসামি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বেন।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ মামলাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়ার বিষয়টি সরকার ‘আগেই ঠিক করে রেখেছে’।