৯২ বিশ্বকাপের মহানায়ক ইমরান খান
পাকিস্তান ক্রিকেট সবচেয়ে বড় ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে ১৯৯২ বিশ্বকাপে। আর সেই ইতিহাসের মহানায়ক ইমরান খান। বলা হয়ে থাকে, কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডারের বদৌলতেই সেবার অসাধ্য সাধন করেছিল পাকিস্তান। কেউ কেউ বলেন, একটা গড়পড়তা দল নিয়ে কিভাবে সতীর্থদের উজ্জীবিত এবং সেরাটা বের করে এনে বিশ্বকাপ জেতা যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছেন ইমরান খান।
সেবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শুরুটা দেখে কেউ কল্পনাও করেননি এই দলটিই টুর্নামেন্ট শেষে ট্রফি হাতে বিজয় উদযাপন করতে যাচ্ছে! কার্যত তাই হয়েছে যা বিশ্বকাপের আগে কেউ ভাবেননি। পাঁচ ম্যাচে জয় মাত্র একটিতে। তারওপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৭৪ রানে অলআউট হয়ে লজ্জায় অধোবদন হতে হয় ইমরানের দলকে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা, চোটে পড়ে ছিটকে পড়লেন সেই সময়ের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার ওয়াকার ইউনিস।
তবে ইমরানের চতুর নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান। পরপর চারটি ম্যাচ জিতে নেয় দলটি। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচটিও ছিল। ফাইনালে পাকিস্তানের সামনে পড়ে সেই ইংল্যান্ড, যাদের কাছে বড় লজ্জা পেতে হয়েছিল ইমরান-জাভেদ মিঁয়াদাদদের।
টস জিতে ব্যাট হাতে তুলে নিলেন ইমরান। কিন্তু দু’ওপেনার আমির সোহেল এবং রমিজ রাজা ২৪ রানের মধ্যেই হাওয়া! মারাত্মক এই বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তোলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের বড়ে মিয়া জাভেদ মিঁয়াদাদ ও ইমরান। নতুন বলে খেলতে গিয়ে গ্রাহাম গুচের বদান্যতায় ব্যক্তিগত ৯ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ইমরান। এরপর আর কোন ভুলচুক করেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। তৃতীয় উইকেটে ইমরান-মিঁয়াদাদ মিলে যোগ করেন ১৩৯ রান। ৫৮ রান করে রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের বলে ড্রেসিংরুমে ফেরেন মিঁয়াদাদ।
আর ১১০ বলে ৭২ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দিয়ে যান ইমরান। পাকিস্তানও পেয়ে যায় বড় সংগ্রহের ভিত। যে ভিতকে আরও শক্তপোক্ত করেন তখনকার দুই তরুণ ইনজামাম-উল-হক ও ওয়াসিম আকরাম। দু’জনে ছয় ওভারে তোলেন ৫২ রান। পাকিস্তানও পেয়ে যায় ২৪৯/৬ রানের স্বাস্থ্যবান স্কোর।
২৪৯ রান তাড়া করতে গিয়ে ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে ইংল্যান্ড। টপ অর্ডারের এই চার ব্যাটসম্যানের উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে নেন মুশতাক আহমেদ, আকিভ জাভেদ এবং ওয়াসিম আকরাম। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে অ্যালান ল্যাম্ব এবং নিল ফেয়ার ব্রাদার ৭২ রান তুলে পাকিস্তানকে চোখ রাঙাতে থাকেন। তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের ইমরান এবার বাজি ধরলেন দলের তরুণ তুর্কি আকরামের হাতে বল তুলে দিয়ে।
গুরুকে নিরাশ করলেন না শিষ্য। আকরাম পরপর দু বলে ল্যাম্ব (৩১) এবং ক্রিস লুইসকে আউট করে ড্রেসিংরুমের রাস্তা দেখালেন। অনেকটা নিজের অজান্তেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেরা একটি স্পেল করে ফেললেন তিনি। যে স্পেলের কল্যাণে কাঙ্খিত সেই বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন ইমরান। আর তরুণ ওয়াসিম আকরাম ফাইনালের নায়ক হয়ে হইচই ফেলে দিলেন গোটা ক্রিকেট বিশ্বে।
১৯৯২ বিশ্বকাপ ও ইমরান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রমিজ রাজা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,‘ একজন মাত্র ব্যক্তি একশত ভাগ নিশ্চিত ছিল যে আমরা যে কোন সময় জিততে পারি অথবা যে কোন ম্যাচ হারতে পারি। তিনি আমাদের অধিনায়ক। সেমিফাইনালে পৌঁছার আগে যেভাবে হেরেছি তাতে আমরা ভেবেছিলাম বিশ্বকাপ জেতা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু এটা যেভাবে ঘটলো সেটা ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। এটা ছিল অসাধারণ এক মুহূর্ত।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন