৯৬ সালের পর থেকেই রংপুরে আসন হারাচ্ছে জাপা
জাতীয় পার্টির (জাপা) দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর। বিগত সময়ের জাতীয় নির্বাচনে এর প্রমাণ মিললেও ১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতি নির্বাচনে এ অঞ্চলে আসন হারাচ্ছে দলটি। জাতীয় পার্টির চিহ্নিত ঘাঁটিগুলোতে মজবুত অবস্থান তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপিও ভোটের হিসেবে এগিয়েছে খানিকটা।
বিগত সময়ের নির্বাচনী ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের বেশিরভাগই পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। সর্বশেষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ অঞ্চলে জাপার আসন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
জানা যায়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের মধ্যে জাপা ১৭টি, আওয়ামী লীগ ৯টি, বিএনপি ১টি, সিপিবি ৩টি, জামায়াত ১টি, বাকশাল ও ন্যাপ ১টি করে আসন পেয়েছিল। সেবছর জাপা প্রার্থীদের জয়ে ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কিছুটা ভালো করেছিল জাপা। সেবছর জাতীয় পার্টি ২১টি, আওয়ামী লীগ ৮, বিএনপি ৩ ও জামায়াত ১টি আসন পায়। ৯৬এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসন কম পেলেও সুবিধা করেছিল জাপা ও বিএনপি।
কিন্তু ১৯৯৬ এর নির্বাচনের পর থেকে এ অঞ্চলে জাপার ছন্দপতন ঘটে। আসনগুলোতে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে থাকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। যার প্রভাব পড়ে ২০০১ সালের নির্বাাচনে। ওই নির্বাচনে ২১টি থেকে কমে ১৪টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। আর আওয়ামী লীগ ৬টি, বিএনপি ৯টি ও জামায়াত পায় ৪টি আসন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চার দলীয় ঐক্যজোটের বিপরীতে আওয়ামী লীগ-জাপার সমন্বয়ে গঠিত হয় মহাজোট। মহাজোট গঠনে বিএনপি-জামায়াত কোণঠাসা হলেও সুবিধা করতে পারেনি জাতীয় পার্টি। এতে আওয়ামী লীগের অবস্থান আরো পোক্ত হলেও আসন হারায় জাতীয় পার্টি।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পায় ১৩টি আসন। আর আওয়ামী লীগ পায় ২০টি আসন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আসন আরও কমে যায়। ওই নির্বাচনে জাপার নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে কম আসন পেয়েছে দলটি। নির্বাচনে মাত্র ৭টি আসন পায় জাপা। আর আওয়ামী লীগ ২৩টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পায় ১টি আসন।
সবশেষ গত রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো ৭টি আসন পেয়েছে দলটি। এরমধ্যে রংপুরে ২টি, নীলফামারীতে ২টি, কুড়িগ্রামে ১টি, গাইবান্ধায় ১টি ও লালমনিরহাটে ১টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৪টি ও বিএনপি পেয়েছে ১টি আসন। তবে জাতীয় পার্টি মহাজোট ছাড়া এককভাবে কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি।
অপরদিকে বিএনপি ১টি আসন পেলেও আওয়ামীলীগের বিজয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন তারাই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, সাংগঠনিক দুর্বলতা, এরশাদ নির্ভরতা, নেতৃত্বের অভাব ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে জাপার বলিষ্ঠ ভূমিকা না থাকায় ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এক সময়ের ক্ষমতাসীন এ দলটি।
তারা জানান, দলটি ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়ে রংপুর বিভাগের পরিবর্তে রংপুর জেলা কেন্দ্রিক হয়েছে।
তবে আসন কমার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ইয়াসীর।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন