গ্রিড বিপর্যয়: উত্তর ও দক্ষিণ জনপদে চরম ভোগান্তি
কালবৈশাখী ঝড়ে সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৩০ কিলোভোল্টের সরবরাহ লাইন। সেই লাইন মেরামত না হতেই মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঘোড়াশাল-ঈশ্বরদী সঞ্চালন লাইনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে করে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩২ জেলার মানুষকে কয়েক ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রায় দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদুৎহীন সময়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন রোগী ও শিক্ষার্থীরা। সমস্যায় পড়ে আবাসিক হোটেলগুলো এবং বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ কলকারখানায় কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে।
দিনাজপুর: প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো বিদ্যুতের সমস্যা থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষকে। দিনাজপুরে জেনারেটরের সাহায্যে জরুরি অপারেশনগুলো করা হয়। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পানির সমস্যায় পড়ে আবাসিক হোটেলগুলো। একই সমস্যা দেখা যায় বহুতল ভবনেও। হোটেল মালিকরা বলেন, বিকল্পভাবে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করা হলেও পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে অনেকেই দুপুরের খাবার কিনে এনেছেন বলে জানান বহুতল ভবনের বাসিন্দারা।
ঝিনাইদহ: বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজেও কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নগরীরর অর্ধশতাধিক বেসরকারি হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে রোগীদের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনন্দ মোহন সাহা বলেন, হাসপাতালের জেনারেটর দিয়ে কিছু সময় জরুরি কয়েকটি ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
নওগাঁ: ২১ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকায় অধিকাংশ এলাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও কল কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। পাশাপাশি দুঃসহ গরমের যন্ত্রণা পোহাতে হয় জেলার সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকের রোগীদের।
নাটোর: নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার কিছু পর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ ছিল না। পরে এলেও তা নিয়মিত চালু ছিল না। বিদ্যুতের অভাবে এক্সরে মেশিন বন্ধ ছিল। এছাড়া রোগ নির্ণয় যন্ত্রগুলো (এনালাইজার) অকেজো হয়ে পড়ে। বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ থাকায় রোগীরা গরমে ছটফট করতে থাকে। চার্জার লাইট ও মোমবাতি দিয়ে আলোর ব্যবস্থা হলেও অস্ত্রোপোচার করা যায়নি। একই ধরনের সমস্যা হয় জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক বেলাল উদ্দিন জানান, জেলার সর্বত্রই ঝড়ে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামত করতে অনেক সময় ও লোকবল দরকার। এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুত সরবরাহ করা গেলেও অধিকাংশ স্থানে এখনও বিদ্যুত দেয়া যায়নি।
রংপুর: টানা চার ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে রংপুরের জনজীবন। থেমে যায় কল-কারখানার চাকা। বিঘ্নিত হয় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। অচল হয়ে পড়ে পেট্রোল পাম্পগুলো।
বিদ্যুতের অভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রোগীদের হাঁসফাঁস অবস্থা সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসাধিন রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের প্রধান মারুফুল ইসলাম বলেন, জেনারেটর সংযোগ লাইন ত্রুটি থাকায় বার্ন ইউনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে চিকিৎসাধিন রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
বগুড়া: বগুড়ায় তিন ঘন্টারও অধিক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। একদিকে অসহ্য গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎবিহীন এমন অবস্থায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে।
বরিশাল: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম জানান, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
বার বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার কারণে লিফট চালু রাখা কিংবা রোগী উঠানো-নামানো নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীদের সিঁড়ি দিয়ে উঠানো নামানো হয়েছে।
পটুয়াখালী: জেলায় প্রায় পাচঁ ঘণ্টা বিদ্যুত না থাকায় পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম স্থবির হওয়ায় ভর্তি বিভিন্ন ওয়ার্ডে চরম ভোগান্তিতে ছিলেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না ছিল না। কলাপাড়া, দশমিনা, মির্জাগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন হাসাপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন সেলিম মিয়া বলেন, চিকিৎসা সেবা দিতে রোগীদের অক্সিজেন খুবই প্রয়োজন। বিদ্যুৎ না থাকলে বিশেষ করে শিশুদের সেবা দিতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
ঝালকাঠি: দিনভর বিদ্যুৎবিহীন থাকায় জেলার হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস ও দোকানপাঠসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স মনিন্দ্র নাথ হালদার গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুর থেকে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎবিহীন ছিল পুরো হাসপাতাল। বিকালেও যাওয়া আসার মধ্যে চলছে। এতে রোগীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন