সেই ‘অসহায় নারী’ থেকে দাপুটে নেতা শেখ হাসিনা
বাবা, মা, ভাই, বোনসহ সব স্বজনকে হারানোর ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে দেশে ফেরা শেখ হাসিনা এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশে ফেরার পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। ৩৬ বছর আগে দেশে ফেরা এক ‘অসহায় নারী’ এখন সারা বিশ্বেই এখন আলোচিত রাজনীতিক। সমসাময়িক যুগে বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিকের তুলনায় এখন তাকে নিয়েই আলোচনা বেশি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আগে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশ যান। আর এই সিদ্ধান্তই বাঁচিয়ে দেয় তাদের দুই জনকে। রয়ে যায় বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের প্রধান পুরুষের রক্তের ধারা।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জার্মানি থেকে ভারতে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এরপর সেখানে ছয় বছর ছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচন করে আর ওই বছরের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনার দিনগুলো ছিল খুবই কঠিন। জিয়াউর রহমানের কঠোর শাসনের দিনগুলোতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে তিনি ঢুকতেও পারেননি। পরে বাড়ির বাইরে মোনাজাত করে দোয়া পড়াতে হয়েছে। এরপর জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহে ক্ষমতা গ্রহণ করেন আরেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জীবনের আরেক কঠিন বাস্তবতা শুরু শেখ হাসিনার।
সেনা শাসন থেকে দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আবার মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। নয় বছর ধরে রাজপথে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। ১৯৯০ সালে পতন হয় এরশাদ সরকারের। পরের বছরের জাতীয় নির্বাচনে হেরে গেলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরে তার নেতৃত্বেই।
এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার হারের পর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। ২০১৪ সালের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে দলের ভেতর অন্যরা যখন হতাশ হয়ে পড়েছিলেনম, তখন তিনিই সাঁতার কেটেছেন বিরুদ্ধস্রোতে। নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসে। দুই দফায় মিলে গত আট বছর ধরেই এখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের তুলনায় বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে। বাংলাদেশকে নিয়ে এখন অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে সারা বিশ্বেই।
তবে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানো সহজ ছিল না। তাকে চট্টগ্রামে গুলি করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে, ঢাকায় প্রকাশ্য জনসভায় চালানো হয়েছে গ্রেনেড হামলা। সব মিলিয়ে ২০ বার হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশে সব সময় বিরোধী দল থাকবে, শেখ হাসিনারও বিরোধী মানুষ থাকবে। কিন্তু এখন রাজনৈতিক শেখ হাসিনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।’
গত আট বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন-এটা এখন তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অস্বীকার করেন না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, সরকারের চেয়েও ব্যক্তি শেখ হাসিনা বেশি জনপ্রিয়।
অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বলবো, শেখ হাসিনা যে জায়গায় এসেছে, তিনি তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতা ও সাধারণ মানুষের ভালবাসায় এই যায়গায় এসেছেন। বেশিরভাগ মানুষের ভালবাসা এবং আস্থার প্রতীক এখন তিনি। তার রাজনৈতিক দূরদর্শীতা এবং দেশ পরিচালনায় দক্ষতার কারণেই তিনি এখানে এসেছেন। এখন দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, এটা প্রত্যেকে স্বীকার করবেন। উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। যারা তার বিরোধীপক্ষ ছিল, তারা আস্তে আস্তে চুপসে গেছে, তাদের গলার স্বর এখন নরম হয়ে আসছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে সাহস সঞ্চার করে বাংলাদেশে এসেছিলেন। দেশে ফেরার পর দীর্ঘ রাজনৈতিক পথক্রমায় তিনি বাংলাদেশের মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন। তিনি এখন দক্ষিণ এশিয়া, তথা বিশ্বের একজন অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।’
ইদানীং সরকার এবং শেখ হাসিনার কড়া সমালোচকদের একজন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরা শেখ হাসিনা আর বর্তমান শেখ হাসিনার মধ্যে তুলনা করতে বললে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন তখন তিনি মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্ছার ছিলেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করেছেন। রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা দিন বদলের স্লোগান দিয়ে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু যেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন সেই প্রতিশ্রুতি অনেকটাই বাস্তবায়ন করেছেন।’
তবে ২০১৪ সালে বিরোধীদলহীন নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র আরও টেকসই হলে উন্নয়নও আরও টেকসই হতো বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু সদূর প্রসারী চিন্তা করলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না যদি গণতন্ত্র মজবুত না হয়।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার দেশে ফেরার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের ধারার সূচনা হয়েছিল। তাঁর দেশে আসার মাধ্যমে দেশের মানুষ হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এবং নিজেদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হয়েছিল।
খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিল বলেই বাংলাদেশে আইনের শাসন, উন্নয়ন অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে পরিচিত হয়েছে। তাই আমি মনেকরি সেদিন যদি নেত্রী দেশে ফিরতে না পারতেন, তাহলে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন হতো।’খবর ঢাকাটাইমসের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন