নড়েচড়ে বসেছেন বিনাভোটের এমপিরা
নড়েচড়ে বসেছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটের এমপিরা। তারা এখন নতুন করে সর্ম্পক গড়তে চাইছে তৃণমুলের নেতাদের সাথে। গত চার বছর এসব এমপির অধিকাংশরাই এলাকায় যায়নি। দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে সর্ম্পক রাখেনি। দলের অধিকাংশ কর্মকান্ডেও অংশ নেয়নি। কেবল দলীয় তদবির ও নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলের হাইকমান্ড।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভাতে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সংসদ সদস্যদের সর্তক করে দিয়ে বলেছেন, এলাকায় গিয়ে জনগনের জন্য কাজ করতে। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। ওই নির্বাচনে দেড়শ এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে। এবার আমি কারও দায়িত্ব নিতে পারব না। যেই হোন না কেন, জনপ্রিয়তা না থাকলে আমি মনোনয়ন দেব না। আপনারা কে কী করছেন, প্রত্যেকের রিপোর্ট আমার কাছে আছে। ছয় মাস পর পর আমি তথ্য নেই। যার অবস্থা ভালো তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জনবিচ্ছিন্ন এমপিরা এবার টের পাবেন, মনোনয়ন নেওয়ার সময়। দলীয় এমপিদের পারফরম্যান্সসহ তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা, দলের বিভিন্ন স্তর এবং সভাপতির পক্ষ থেকে এমপিদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান,সাংগঠনিক সম্পাদকদের বলা হয়েছে, অভিযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন এমপিদের সতর্ক করতে। তৃণমূলের ক্ষোভ নিরসনে প্রতিনিয়ত কাজ চলছে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেও মনোনয়নে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবারও তৃণমূলের মতামতকে মূল্যায়ন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার প্রধান মাপকাঠি হলো- জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং জনগণের সমর্থন। এরমধ্যে যেসব এমপি এলাকায় যায়নি তাদের জন্য যাতে উন্নয়ন কর্মকান্ড ম্লান হয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দলের সভাপতির ঘনিষ্ঠ একাধিক জেষ্ঠ্য নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত এরকম প্রায় একশ সংসদ সদস্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। নেতৃবৃন্দ জানান, প্রাথমিকভাবে তৃণমুল থেকে করে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর এই তালিকা তৈরির কাজ তদারকি করছেন বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা।
এছাড়াও দলের সভাপতি নিজস্ব লোক দিয়েও তৃণমুল থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করছেন। তারা বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কোনোভাবেই জনবিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। জনবিচ্ছিন্ন হলে আমিও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে পারব না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামীতে যাছাই-বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে, এটি সত্য। এক্ষেত্রে নতুন মুখও আসবে। যেসব সংসদ সদস্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং বির্তকিত তাদের ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায় একেবারেই কঠোর। তিনি বলেন, বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাবেন না। এটি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গডফাদার বনে যাওয়া, জনবিচ্ছিন্ন হওয়া, কোন্দল তৈরি করা, টেন্ডার-চাঁদাবাজিসহ দখলদারিত্বের গুরুতর অভিযোগ ওঠা সংসদ সদস্যদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, উল্লেখযোগ্য নতুন মুখ আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। এলাকায় যাদের ইমেজ ভালো, পরিচিতি রয়েছে, শিক্ষিত, মার্জিত ও মানুষের আপদ-বিপদে এগিয়ে আসেন, তাদের ভেতর থেকেই এবার বেশি মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, কষ্ট ছাড়াই যদি আপনি ক্ষমতা পেয়ে যান, তাহলে তো জনগনের আশা আকাঙ্খা আপনি বুঝবেন না।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কমপক্ষে একশ’ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে টেন্ডার-চাঁদাবাজি, দলের ভেতর কোন্দল তৈরি, গডফাদার ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। দলীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ২০ তারিখ জেলার নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য জানার চেষ্টা করবেন দলীয় সভাপতি।
কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারকরা আরও জানান, এবার শতাধিক নতুন নেতা মনোনয়ন পাবেন। কারণ যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাদের অনেকের প্রতি এলাকার মানুষের বিভিন্ন কারণে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এই ক্ষোভ যাদের বিরুদ্ধে বেশি, তাদের বাদ দিয়ে সেখানে নতুন মুখ মনোনয়ন দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে লাভবান হবে দল। কারণ নতুনরা কাজ করে। পাশাপাশি তাদের প্রতি আকর্ষণ থাকে সবার। এই আকর্ষণকে পুঁজি করে সুফল ঘরে তোলা যাবে। পাশাপাশি বিতর্কিতদের শাস্তিও দেওয়া হবে, নতুন মুখ দিয়ে সুফলও পাওয়া যাবে। এই হিসাব-নিকাশও রয়েছে সংসদ সদস্য বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে।
নেতারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতারা। এসব ঘটনায় যেসব নেতা, এমপি বা মন্ত্রীরা ইন্ধন যোগাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ভাবছে কেন্দ্র। খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও কারও কারও কর্মকান্ডে চটেছেন বলে দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নেতারা দুটি ঘটনার উদাহরণ টেনে জানান, বিশেষ করে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগরের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সম্পৃক্ততার অভিযোগ গণমাধ্যমে আসা এবং স্থানীয় পর্যায়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক এবং র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মধ্যে কোন্দল, চট্টগ্রামের দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্ধের জেরে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও আমলে নিয়েছে দলের হাই কমান্ড। এই ধরনের আপরও ঘটনা সারা দেশব্যাপী ঘটেছে। সেগুলোও স্থানীয় নেতাদের নামে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যাতে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন