বিমানবন্দর সড়কে মুক্তিযুদ্ধের ‘সবচেয়ে উঁচু’ ভাস্কর্য স্থাপন
‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ মুক্তিযুদ্ধের এই স্লোগানটি ধারণ করে রাজধানীর নিকুঞ্জে নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নতুন ভাস্কর্য ‘বীর’। ‘বনানী ওভারপাস-এয়ারপোর্ট মোড় বিউটিফিকেশনে’র আওতায় দেশের সবচেয়ে বড় এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব অর্থায়নে ও পরিকল্পনায় বনানী-বিমানবন্দর সড়কের নিকুঞ্জের ১ নম্বর গেইট বরাবর স্থাপিত হয়েছে এই ভাস্কর্য। পাশেই নিকুঞ্জ ২ নম্বর গেইটে আরো একটি ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলছে। সেটির কাজ শেষ করতে আরো মাসখানেক সময় লাগবে বলে জানা গেছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সর্বোচ্চ উচ্চতার ভাস্কর্য এটি। ভাস্কর্যটিতে দেখা যায়, গ্রেনেড ছুড়ে মারছেন তরুণ এক যোদ্ধা আর সামনের দিকে অস্ত্র হাতে এগিয়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা নারী। রাইফেল তাক করে ধরেছেন আরও দুই তরুণ। পেছনে উড়ছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে রাঙামাটি ক্যান্টনমেন্টে নির্মিত ৫০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটিকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সর্বোচ্চ উচ্চতার ভাস্কর্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এবার সাড়ে ৫৩ ফুট উচ্চতার ‘বীর’ সেটির স্থান নিতে চলেছে। এর দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ৬২ ফুট। কমপক্ষে একশ বছর টিকে থাকতে সক্ষম এ ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ শেষের দিকে। চার মাস ধরে এর নির্মাণকাজ চলছে।
এই ভাস্কর্যের ডিজাইনার চারুকলার পেইন্টিং বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক পাস করা হাজ্জাজ কায়সার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার জন্য এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে এমন কিছু স্থাপনা বা নিদর্শন রয়েছে যা সেই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। আমরাও সেই চিন্তা থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে বীর ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছি।’
এই ভাস্কর বলেন, ‘এটি নির্মাণের শুরুতে আয়রন স্ট্রাকচার করা হয়েছে। তার ওপর ব্যবহার করা হয়েছে সিমেন্ট। সিমেন্টের ওপর জিপসাম পুডিং, ডকোপেইন্ট, টকোপ্রিন্ট এবং সবশেষে অ্যান্টিক ব্রোঞ্জ লাগানো হয়েছে।’
তরুণ এই ডিজাইনার বলেন, বনানী-বিমানবন্দর সড়কের নিকুঞ্জের ১ নম্বর গেট বরাবর এ ভাস্কর্য চারদিক থেকে এবং দূর থেকেও দেখা যাবে। কারণ আশপাশে কোনো বহুতল ভবন নেই। ঠিক ওপরে প্লেনের উড্ডয়ন রোড হওয়ায় আকাশ থেকেও ‘বীর’ ভাস্কর্যটি দৃশ্যমান হবে।
বনানী ওভারপাস-এয়ারপোর্ট সড়কের বিউটিফিকেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ মনসুর বলেন, ‘ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। পাশেই নিকুঞ্জ ২ নম্বর গেইটে আরো একটি ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভাস্কর্যস্থলে ফোয়ারা ও ল্যান্ডস্কেপের কাজ করা হবে। তখন সন্ধ্যা হলেই সাত রঙের এলইডি আলো ফুটে উঠবে ভাস্কর্যটি ঘিরে। মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করা হচ্ছে এই সাতটি রঙের মধ্য দিয়ে।’
আবেদ মনসুর বলেন, ‘ফোয়ারার জন্য দুটি হাউজে ১০০টি নজেল দেওয়া হচ্ছে। দিন-রাত ফোয়ারা থেকে পানি উৎসারিত হবে। এ ছাড়া ভাস্কর্যের নিচের অংশে ল্যান্ডস্কেপে অসংখ্য বর্ণিল গাছপালা থাকবে। বারো মাসই ওই গাছগুলোতে ফুল থাকবে।’
তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, শুধু ‘বীর’ নয় কুড়িল থেকে বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট পর্যন্ত রাস্তার ডান পাশে চলছে আরও আটটি ভাস্কর্যের নির্মাণকাজ। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকাইয়া, নদীমাতৃক, বায়ান্ন, ঊনসত্তর ও একাত্তর নামের ভাস্কর্য। আর বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটের বিপরীত পাশে বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখে নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে ‘আমরা বা মোদের’ নামের ভাস্কর্য। এখানে সারাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো ফুটিয়ে তোলা হবে।
এই ভাস্কর্যের মধ্যবর্তী স্থানে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে দেখানো হবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। বিদেশ থেকে কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথি এলে তার ছবিও তখন ভেসে উঠবে এতে। এ ছাড়া লা-মেরিডিয়ান হোটেলের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের স্মরণে ‘অ্যালিবেন্থ সেক্টর’ ও কাওলার আগে পর্যন্ত রাস্তার বাম পাশে ভাস্কর্য ‘জলরাশি’। শুধু নাম নয়, প্রতিটি ভাস্কর্যের বিষয়বস্তুতেই থাকছে দেশীয় ঐতিহ্য ও বীরত্বগাঁথার উপস্থাপন।
আবেদ মনসুর জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলতি বছরেই শেষ হবে বিমানবন্দর সড়কের বিউটিফিকেশনের কাজ। এই ভাস্কর্যগুলো সেই বিউটিফিকেশনেরই অংশ। বিউটিফিকেশনের কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ঢাকা সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ‘প্রথাগতভাবে এ ভাস্কর্যের স্থপতি বিখ্যাত কেউ নন। চারুকলা থেকে পাস করা কয়েকজন মেধাবী তরুণ গ্রুপস্টাডির মাধ্যমে ‘বীর’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন। তবে মূল ডিজাইনার চারুকলার পেইন্টিং বিভাগ থেকে সদ্য পাস করা হাজ্জাজ কায়সার। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার টিম। আর ফাউন্টেইন নির্মাণ তদারক করছেন সাবির সারওয়ার উপল।
ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই প্রকৌশলী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন