কাকে মানবে সিএনজি স্টেশন- প্রতিমন্ত্রী নাকি তিতাস?

রমজান মাসে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) ফিলিং স্টেশন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে তিতাস। একই দিন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই স্টেশনগুলো বন্ধ থাকবে।

এদিকে সিএনজি স্টেশনগুলোর সংগঠন দাবি করেছে, তাঁদের সঙ্গে আলাপ না করেই ওই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি তাঁরা জানেনও না আসলে কোন সময় স্টেশন বন্ধ থাকবে। তাঁরাও গণমাধ্যম থেকে দুই ধরনের তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করেন।

অন্যান্য বছর রমজান শুরুর চার থেকে পাঁচদিন আগে স্টেশন মালিকদের সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া হলেও এবার সময়সূচির বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

গত বছর রমজানে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অর্থাৎ ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।

তিতাসের একটি সময়

গতকাল বৃহস্পতিবার সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখা নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিতাস। যা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ‘সরকার বর্ধিত গ্যাস চাহিদা লাঘব এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পবিত্র রমজান মাসে সাময়িকভাবে সারা দেশে সকল সিএনজি স্টেশন প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোম্পানির ভিজিল্যান্স টিম মনিটরিং করবে এবং সিদ্ধান্ত অমান্যকারী সংশ্লিষ্ট সিএনজি স্টেশনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০ অনুযায়ী সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রীর অন্য সময়

গতকালই বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে জানান, রমজান মাসে সারা দেশের সিএনজি স্টেশন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া সময়ই পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।

‘আমরা কোন সময়টাকে ধরে নেব’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান বলেন, ‘এ বছর কখন সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ রাখা হবে তা নিয়ে আমাদের সাথে কোনো ধরনের কথা হয়নি। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া সময়সূচি নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছি। কোনো মিডিয়া বলছে, বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমাদের স্টেশনগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আবার কিছু মিডিয়া বলছে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা। এমন হলে আমরা কোন সময়টাকে ধরে নেব।’

মাসুদ খান আরো বলেন, ‘অন্যান্য বছর তিতাস আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় বসত। তারপর সেখানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেই আলোকে তাঁরা স্টেশনগুলোতে চিঠি পাঠান। এ বছর এখন পর্যন্ত তাঁরা আমাদের কোনো কিছুই জানাননি।’

মাসুদ খান আরো বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে মন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্ত দেওয়া খুব আশ্চর্যজনক। এমন ঘটনা আগে কখনো হয়নি। তিনি আরো বলেন, ‘মন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়টাতে আমাদের ব্যবসার সমস্যা হবে। কারণ এত গভীর রাতে কয়জন সিএনজি স্টেশনে গ্যাস নিতে আসবেন?’

আজ শুক্রবার রাজধানীর মগবাজারের অনুদীপ সিএনজি স্টেশনের প্রকৌশলী পলাশ ইসলাম বলেন, ‘আগের বছর রমজানের তিন থেকে চারদিন আগেই মন্ত্রণালয় ও তিতাসের চিঠি আসত। আমরা ওই আলোকে নিজেদের মধ্যে একটা প্রস্তুতি নেই। কিন্তু এবারে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের চিঠি পাইনি।’

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘রমজানে সিএনজি স্টেশনগুলোর সময়সূচির বিষয়ে গতকাল বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কথা আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। তিনি স্টেশনগুলো বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলেন। এরপরই আমরা বিষয়টি প্রতিমন্ত্রীকে জানাই। পরে প্রতিমন্ত্রী বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা সময়ই ঠিক রাখতে বলেন।

সাংবাদিকদের দেওয়া সময়সূচি প্রতিমন্ত্রী কোথায় পেলেন জানতে চাইলে মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য না করাই ভালো।’