৪৮ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন লাগাচ্ছেন গাছ
নাম তার আবদুস সামাদ শেখ। কিন্তু মানুষ তাকে ডাকে ‘গাছ সামাদ’ বলে। গেল চার যুগ (৪৮ বছর) ধরে প্রতিদিন তিনি গাছ লাগিয়ে চলছেন। বছরে ৩৬৫টি হিসেবে এ যাবত তার লাগানো গাছের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫২০টির বেশি।
অবাক করা ঘটনা হচ্ছে তার নিজের কোনো জমি নেই। ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দুটো কুঁড়ে ঘরেই মাথা গুঁজে থাকেন। পেশায় যেহেতু রিকশাচালক তাই সকাল সকালে রিকশা নিয়ে বের হন।
হাতে কিছু টাকা এলেই ছুটে যান নার্সারিতে। চারা গাছ কিনেই খুঁজতে শুরু করে লাগানোর জায়গা। রাস্তার ধারে, খাস জমিতে, শশ্মানে, নদীর পাড়ে কিংবা পুকুরের পাড়; যখন যেখানে সুযোগ পান লাগিয়ে দেন একটা গাছ। শুধু কি তাই লাগানো গাছে তো যত্নও করতে হবে। তাই নিয়মিত যত্ন করা কিংবা পানি দিতেও ভোলেন না।
গাছ সামাদের বাড়ি ফরিদপুর শহরতলীর ভাগনডাঙ্গা গ্রামে। তাই আগে গোটা ফরিদপুর সদরেই লাগিয়েছেন অসংখ্য গাছ। তবে কালক্রমে গাছ লাগানোর পরিধি তার বেড়ে গেছে। শুধু ফরিদপুর সদরই নয়, পাশের উপজেলা চরভদ্রাসন, সদরপুর, মধুখালী এমনকি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় তিনি অসংখ্য বৃক্ষ রোপন করেছেন।
তবে শুধু গাছ লাগিয়েই কাজ শেষ করেন না। যতদূরেই গাছ লাগান কেন, সেখানে গিয়ে ঠিকই প্রতিদিন গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দেন। যত্ন নেন।
আমরা যারা প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের বিবেকের ঘরে অনুররণ সৃষ্টি করে কিছু প্রথাবিহীন স্বশিক্ষিত মানুষ। সেই মানুষদেরই একজন আবদুস সামদ শেখ। যিনি ইতোমধ্যে ‘গাছ সামাদ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। অভাব ও সংসারের দৈন্যদশাকে উপেক্ষা করে আমৃত্যু তিনি গাছ লাগিয়ে যাবেন বলে সংকল্প করেছেন পেশায় রিকশাচালক এই গাছ সামাদ।
গাছ লাগানোর রাষ্ট্রীয় আর সামাজিক আন্দোলন বেগবান করার জন্য কতকিছু করা হচ্ছে। কিন্তু এই সামাদরা বড় প্রকৃতি প্রেমিক। তারা আমাদের মতো আধুনিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষদের কাছে বিস্ময়ের, অনুকরণের চরিত্র। আমাদের প্রকৃতি-পরিবেশ কিংবা ভবিষৎ পৃথিবীর জন্য তারা বড় নিয়ামক। তাদের কাছে আমরা ঋণি।
স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই নিঃস্বার্থ প্রকৃতি প্রেমিক। চলতি বছরে জাতীয় ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের ২৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে গাছ সামাদকে সম্মাননা ও পুরষ্কৃত করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন